শনিবার | ৯ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ খবর :
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও ছাড়তে পারছে না ভারত রাশিয়াকে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী অন্তর্বর্তী সরকারের ১ বছর, সমালোচনা কমাতে পারে ‘ভালো নির্বাচন’ শান্তির ‌‘অলিম্পিক গোল’ আর তৃষ্ণার হ্যাটট্রিকে ৮ গোলের জয় বাংলাদেশের গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় আটক ৫ রাজশাহীতে ৬ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ রাজশাহীতে জুলাইযোদ্ধা ম্যানহলে পড়ার ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত বিএনপি পরিবারের সবাইকে নিয়ে সম্মেলন হবে: মিলন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্যের মন খারাপ: মেজর হাফিজ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষায় ‘মঞ্চ ৭১’-এর আত্মপ্রকাশ তফসিলের আগে এসপি-ওসিদের বদলি হবে লটারির মাধ্যমে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ব্যর্থতার পাল্লা ভারী অন্তর্বর্তী সরকারের ১ বছর, সমালোচনা কমাতে পারে ‘ভালো নির্বাচন’

ব্যর্থতার পাল্লা ভারী অন্তর্বর্তী সরকারের ১ বছর, সমালোচনা কমাতে পারে ‘ভালো নির্বাচন’

প্রবাহ ডেস্ক: গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়ে এক বছর পার করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চরম বৈরী পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিতে হয়েছিল অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে। সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে অভ্যুত্থানে দেশ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশাও ছিল অনেক। এক বছর শেষে মূল্যায়নের কষ্টিপাথরে অর্জন ও ব্যর্থতার হিসাবের মুখোমুখি অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার।

বিশিষ্টজন ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন, এ সরকার গত এক বছরে গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছে। যদিও এগারোটি সংস্কার কমিশন গঠনসহ আইন সংশোধন করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা ছিল সরকারের। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো সফলতা তারা দেখাতে পারেনি।

জনপ্রশাসন সেই তিমিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। স্থবিরতা কাটিয়ে গতি ফেরেনি প্রশাসনে। এ সরকারকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ক্রমাগত ব্যর্থতা সরকারের অন্যসব অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে।

তবে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের দাবি-দাওয়া আদায়ের লাগামহীন আন্দোলন, অনভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনাসহ নানা চ্যালেঞ্জও ছিল সরকারের সামনে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জন রয়েছে তাদের। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গঠন করা ১১টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। জুলাই ঘোষণাপত্র দেয়া হয়েছে। জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের সহায়তার কাজও অনেকদূর এগিয়েছে।

 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুতত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ওই সময় নিয়োগ পান ১৬ জন উপদেষ্টা। ঢাকা ও দেশের বাইরে থাকায় তিনজন উপদেষ্টা ওইদিন (৮ আগস্ট) শপথ নিতে পারেননি। তারা পরে শপথ নেন। পরে আরও চারজন উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হন। সর্বশেষ গত বছরের ১০ নভেম্বর তিনজন উপদেষ্টা যুক্ত হন। অন্যদিকে ২০ ডিসেম্বর বিমান ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ মারা যান। এখন এ সরকারে প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট উপদেষ্টা ২৩ জন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার মধ্যেই দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর বাহিনীগুলোর পুনর্গঠনের কাজে হাত দিলেও পরিস্থিতির উন্নয়নে খুব একটা সফলতা আসেনি বলে মনে করা হয়।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি পুরোদমে ফিরে এসেছে। চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। খুনোখুনি, ধর্ষণ, ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়ই আলোড়ন তুলছে।

সচিবালয়ের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপদ জায়গায় দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনকারীদের জোর করে ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। হয়েছে ভাঙচুরের ঘটনাও।

এ সরকার ‘মব’ ঠেকাতেও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মবের মাধ্যমে একটি শ্রেণির আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেই চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে বিভিন্ন মহল থেকেই বলা হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে তাদের অর্জন আছে।

সরকার দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়েছে। কাউকে ওএসডি করা হয়েছে, কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কারও কারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বঞ্চিত বিবেচনায় অনেক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এগুলো দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনজিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। যারা অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ ও সৎ, তাদের সুযোগ দেয়া হয়নি। পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে একই অবস্থা হয়েছে। এসব কারণে প্রশাসনটা দুর্বল হয়ে গেছে।

বিতর্কের মুখে অনেকের নিয়োগ, পদায়ন বাতিলও হয়েছে। ভুলগুলো শুধরে নিতে দেখা যাচ্ছে বারবার সিদ্ধান্ত বদল। অনভিজ্ঞতা এ সরকারের বড় দুর্বলতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এক বছরেও কাঙ্ক্ষিত গতি ফেরেনি প্রশাসনে।

দীর্ঘদিন অনেক মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে কর্মকর্তা পদায়ন করতে পারেনি সরকার। শীর্ষ কর্মকর্তা না থাকায় অন্তত দশটি মন্ত্রণালয়ে কাজে ধীরগতি ছিল। এখনো বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজের বাইরে কোনো কার্যক্রম বা উদ্যোগ নেই বলে জানা গেছে।

দায়িত্ব নেয়ার পর এক বছরের প্রতিটি মুহূর্তই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছে এ সরকারকে। এ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত সরকারের সময়ে ‘বঞ্চিত’ দাবি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একযোগে আন্দোলন শুরু করেন। শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের নানা দাবির মুখেও কোণঠাসা ছিল সরকার। সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে টানা এক মাসেরও বেশি সময় আন্দোলন করেন কর্মচারীরা।

রাজনৈতিক দলগুলোরও অসহযোগিতা মাঝে মাঝেই চরম অসহায় অবস্থায় ফেলেছে সরকারকে। মব ভায়োলেন্স দমন ও নানান ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে সরকারকে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও মাঝে মাঝে বিপাকে ফেলছে সাধারণ মানুষকে। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মান ধরে রাখা নিয়েও চাপে রয়েছে সরকার।

সরকারকে কয়েকটি বন্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে। সর্বশেষ রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ মোট ১১টি কমিশন গঠিত হয়।

সবগুলো কমিশন এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এছাড়াও ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

 

কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, এ সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের মধ্যে যেগুলো আশু বাস্তবায়ন করা দরকার সেগুলো নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সুপারিশগুলোর মধ্যে আইন উপদেষ্টা ১২১টি সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য চিহ্নিত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান। এগুলোর মধ্যে মোট ১৬টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৮৫টি সুপারিশ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ১০টি সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়ন হচ্ছে। আর ১০টি বাস্তবায়নযোগ্য কি না, সেটা এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের অর্জনের বিষয়টি অনেকেই স্বীকার করেন। চরম বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ জুলাইয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে প্রায় অর্ধেকে নামানো হয়েছে। সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে (যা ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন), রেমিট্যান্সে রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, রপ্তানি ৯ শতাংশ বৃদ্ধি, বহু বছর পর টাকার মান ডলারের বিপরীতে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল শুল্ক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে (যেমন হানদা গ্রুপের ২৫ কোটি ডলারের টেক্সটাইল বিনিয়োগে ২৫ হাজার কর্মসংস্থান) এবং আগের সরকারের চেয়ে দ্বিগুণ এফডিআই প্রবাহ।

প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের এক বছর মূল্যায়ন করে সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘বর্তমান সরকার পেপার ওয়ার্ক হয়তো খারাপ করেননি, ওনারা এক্ষেত্রে ভালো করে করেছেন। তারা যে কমিশনগুলো করেছে, তারা যে রিপোর্ট দিয়েছে, এগুলো পেপার ওয়ার্ক। বাস্তব কাজ বা অপারেশনার ওয়ার্ক যদি বলেন তাহলে আমি খুব একটা সফলতা দেখি না এ সরকারের।

তিনি বলেন, ‘সিভিল সার্ভিসের বিশৃঙ্খল অবস্থা এখনো ঘোচেনি। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি দূর, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি- এগুলোতে দৃশ্যমান কোনো অর্জন নেই। পেপার ওয়ার্কের ক্ষেত্রে ওনারা চেষ্টা করেছেন, কিছু কাজ করেছেনও। এখন সেটা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সেটা দেখতে হবে। এগুলো বাস্তবায়ন হলেও সেটার কৃতিত্বও ওনারা পাবেন।’

‘তাদের কিছু নিয়োগ সাংঘাতিকভাবে বিতর্কিত হয়েছে। সেটা রাজনৈতিক ও আমলা দুই পর্যায়েই। এখন একটা কাজ ওনাদের সামনে আছে, সেটা হলো নির্বাচন। এটা যদি ওনারা ভালোভাবে করতে পারেন, তাহলে হয়তো ওনাদের নিয়ে ভবিষ্যতে সমালোচনা কম হবে। এটা করতে না পারলে ওনাদের সমালোচনার পাল্লাই ভারী হবে।’

বর্তমান সরকার কিছু আবেগী কাজও করেছে মন্তব্য করে আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে যে জটিলতা তৈরি করেছে, অনেকে মনে করেন এটা চীনের সঙ্গে বেশি মাখামাখির কারণে।’

সরকার উপদেষ্টা ও আমলা পর্যায়ে জনবলটা একেবাবেই গোছাতে পারেননি জানিয়ে সাবেক এ সচিব বলেন, ‘যাদের চুক্তি দেয়া হয়েছে তাদের নিয়ে বিতর্ক আছে। পদোন্নতিতেও বিতর্ক আছে। অনেকে মনে করে ন্যায়বিচার হয়নি। আপনি যখন রাষ্ট্র চালাতে যাবেন, তখন শুধু পরিচিত মুখ খুঁজলে হবে না। কারণ, পুরো দেশটা আপনার, কাজেই পুরো দেশ কীভাবে ভালো চলবে, সেই উপায় আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন আওয়ামী লীগ আমলাতন্ত্রের একটা সিন্ডিকেটের খপ্পরে ছিল, ওনারাও আমলাতন্ত্রের একটা সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়েছেন। সেটা হলে তো আর তাফাৎ কী থাকলো।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক এ সচিব আরও বলেন, ‘ওনাদের (সরকার) কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, যে কারণেই হোক ওনারা সেটা পূরণ করতে পারেননি। নিঃসন্দেহে তাদেদের অনেক চ্যালেঞ্জও ছিল। একটা ভাঙাচোরা অবস্থা তারা পেয়েছে। এ অবস্থাটাকে চাঙ্গা করার জন্য যেমনটা প্রত্যাশা ছিল, সেখানে বিচ্যুতি রয়েছে।’

‘একটা স্মার্ট গ্রুপ প্রয়োজন ছিল, সেটা তারা সাজাতে পারেননি। আর সমন্বয়েরও অভাব ছিল।
ওনারাও সিভিল সার্ভিসের একটি গ্রুপের কাছে জিম্মি হয়ে গেছেন। জিম্মি হয়ে গেলে আর ভালো কাজ করা যায় না।’

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘এ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সঠিক কর্মপরিকল্পনা করতে পারেনি। তাদের উচিত ছিল- আমরা এক বা দুই বছর থাকবো, এসময়ে এই এই কাজগুলো করবো। এটা করতে গিয়ে যদি ফেল করি, তবে ওটা করবো। কিন্তু সেই কর্মপরিকল্পনা না থাকাটাই তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন, মবসহ বিভিন্ন কারণে জনপ্রশাসনের নিরপক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তারা চুপ হয়ে গেছেন। তাদের যেটুকু সার্ভিস দেয়ার কথা, সেটা থেকে তারা বিরত থেকেছেন। এ ফাঁকে যারা সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিপরায়ণ তারা সামনে এসে গেছে। সরকার তাদের নিজেদের পছন্দমতো লোকদের নিয়োগ করেছে। এটা করার কারণে জনস্বার্থ সংরক্ষণ হয় এমন কোনো কাজই করতে পারেনি।’

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অন্য কমিশনগুলো থেকে নিম্নমানের মন্তব্য করে সাবেক এ আমলা বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এমন কতগুলো সুপারিশ করেছে, যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও জনপ্রশাসনের সক্ষমতা দেখতে হবে। যেখানে ক্যাডার বিরোধ আগে থেকেই আছে, তারা সেটাকে আরও উস্কে দিয়েছে। কমিশন তাদের সঠিক ভূমিকাটা রাখতে পারেনি।’

‘প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনজিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। যারা অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ ও সৎ, তাদের সুযোগ দেয়া হয়নি। পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে একই অবস্থা হয়েছে। এসব কারণে প্রশাসনটা দুর্বল হয়ে গেছে।’

ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘এখন জনপ্রশাসনের যে অবস্থা, তাতে এ প্রশাসন এক দশকেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না আমরা সন্দেহ আছে। প্রশাসন আগেই খারাপ অবস্থায় ছিল, লেজুড়বৃত্তি ও দুর্নীতিতে ডুবে ছিল। ওই গ্রুপটা তো গেছে। তাদের মধ্যেও তো অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তারা ছিলেন, এ সরকার তাদের বাছাই করতে পারতেন। গণহারে সবাইকে একভাবে দেখা ঠিক হয়নি।’

অধ্যাদেশগুলো প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অদক্ষতা ফুটে উঠেছে জানিয়েছে তিনি বলেন, ‘যে অধ্যাদেশগুলো করা হয়েছে, একটি আইনও শুদ্ধভাবে করতে পারেনি। বিশেষ করে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, এটা নিয়ে এত আন্দোলন হলো। এরপর এটি আবার সংশোধনও হলো। এখনো এ অধ্যাদেশে মারাত্মক ভুল রয়ে গেছে। এটি সংবিধানের ১৩৫ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। এখানে যেসব ভুল করেছে সেটা একটা বাচ্চাও করবে না।’

তাদের ছোটখাটো অর্জন আছে। বড় কোনো অর্জন দেখছি না। আর্থিক খাতে একটু ভালো দিক আছে, মন্দের ভালো’- বলেন ফিরোজ মিয়া।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ের নির্বাচনগুলোর সঙ্গে কি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জড়িত ছিল না? ডিসি, এসপিদের সাপোর্ট তো দিতো নির্বাচন কমিশনের লোকজন। নির্বাচন কমিশনে কি শুদ্ধি অভিযান হয়েছে? দুদকেও কী চার কমিশনারই শুধু ভুয়া মামলা, দায়মুক্তি দিয়েছে, এর পেছনে কি কর্মকর্তারা জড়িত ছিল না? সেখানে কি শুদ্ধি অভিযান হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও দুদকে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা উচিত।’

৮ আগস্ট সরকারের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এরমধ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, প্রশাসন ভেঙে পড়া, মোটাদাগে বড় বড় জায়গায় সরকারের একটু ব্যর্থতা দৃশ্যমান, যেটা মানুষ বলছে, গণমাধ্যমেও আসছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনার সঙ্গে আমি একমত নই। আমরা কিছুদিন আগে গত সাড়ে পাঁচ বছরের অপরাধের পুরো পরিসংখ্যান দিয়েছি। ওই পরিসংখ্যান কিন্তু প্রমাণ করে না আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি একটা-দুইটা খুব সেনসেশনাল মার্ডার হলে, অনেকে ভাবছেন বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বুঝি ভেঙে পড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সকে বলে দিয়েছি পুরো স্বচ্ছ থাকতে। তারা প্রতি মাসের পরিসংখ্যান দিচ্ছে।’


ads



©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.