শনিবার | ২রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ খবর :
৮ আগস্ট ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কা নেই: পুলিশ

৮ আগস্ট ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কা নেই: পুলিশ

প্রবাহ ডেস্ক: ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ বৈঠকের রহস্য উদঘাটন এবং এর পেছনে জড়িতদের বের করতে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৮ আগস্ট ঘিরে নানা হুমকির বিষয়ে পুলিশ বলছে, আগস্টকেন্দ্রিক কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা নেই।

গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠকের’ ঘটনায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ বৈঠকে মেজর সাদিকুল হক নামের এক সেনা কর্মকর্তার বৈঠকে অংশ নেয়ার অভিযোগ উঠলে তাকে হেফাজতে নেয় সেনাবাহিনী।

বৈঠক ও গ্রেফতার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা এলাকায় কে বি কনভেনশন হলে একটা বৈঠক নিয়ে আমাদের কাছে তথ্য ছিল।

কনভেনশন হলটি শামীমা নাসরিন শম্পা নামে একজন ব্যক্তি ভাড়া নেন। সে সময় তিনি বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে একটা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছিলেন। যেখানে ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ লোকজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় একটি মামলা করা হয় বলেও জানান তিনি।

তালেবুর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে এরই মধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনার অন্যকোনো দিক আছে কি না, এর প্রকৃত রহস্য কী এবং কারা এর পেছনে রয়েছে?

ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত শিগগিরই উন্মোচন করার আশাপ্রকাশ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বৈঠক এবং ৮ আগস্টের বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা ‘হুমকির’ আলোচনা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তালেবুর রহমান বলেন, আমরা গত একটা বছরে বিভিন্ন সময় দেখেছি, নানা সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম অনেকেই করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সজাগ রয়েছি।

গত ১ বছর থেকে ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন ‘উন্নতির দিকে’ যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে আগস্টকেন্দ্রিক কোনো রকমের নিরাপত্তা শঙ্কা দেখছি না। আমরা সবসময় সতর্ক রয়েছি। আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা রয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘বিনষ্ট’ করার জন্য কিছু লোক ‘বিভিন্ন অপচেষ্টা’ অব্যাহত রেখেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলেন তিনি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ‘গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখার কথা জানান এবং এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠনের ৮ জনকে গ্রেফতারের তথ্য দেন।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য আছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে কারও বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, কোনো রকম আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে আমরা গ্রেফতার করছি। এক্ষেত্রে একটা বিষয় পরিষ্কার কাউকে ঢালাওভাবে বা কাউকে হয়রানিমূলক গ্রেফতারের কোনো অবকাশ নেই।

ডিএমপি কোনো ‘গণগ্রেফতার’ বা ‘হয়রানিমূলক গ্রেফতার’ করছে না বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

এর বাইরে গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় ৪৮৯টি টহল টিম এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৬৬টি চেকপোস্ট পরিচালিত হওয়ার তথ্য দেন তিনি।

গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ২০টি মোবাইল, ৬টি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক জব্দের তথ্য দেন তালেবুর রহমান।

এ সময় তিনি গত ২৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে সাবেক এক মহিলা এমপির বাসায় চাঁদা দাবির ঘটনায় সর্বমোট ছয়জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছেন।

যাদের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে চারজন রিমান্ডে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার সূত্রপাত গত ১৭ জুলাই। সকাল আনুমানিক ১০টার সময় জানে আলম তপু ও রিয়াদ নামে দুইজন ওই বাসায় প্রথম যায়। গিয়ে তারা ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং সেদিনই তারা ১০ লাখ টাকা নগদ নিয়ে আসে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। পরে ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় ওই বাসায় গিয়ে বাকি ৪০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ২৬ জুলাই আরও লোকজন বাড়িয়ে সেখানে যায় এবং বাকি টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

তখন পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে এবং একজন পালিয়ে যায়।

সেই পলাতক জানে আলম তপুকে ঢাকার গোপীবাগ এলাকা থেকে শুক্রবার গ্রেফতারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিতো।

এছাড়া, রিয়াদের বাবুবাজারের বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক এবং পরে বাড্ডার আরেকটি বাসা থেকে নগদ ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করার কথাও জানান তিনি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে আমাদের তদন্ত কাজ অব্যাহত বলে জানান তিনি।


ads



©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.