রবিবার | ২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ খবর :
প্রধান উপদেষ্টা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না: মান্না সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি তিন উপদেষ্টাকে বহিষ্কার না করলে সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে: দুদু রিশাদকে নিয়ে ফাইনালে নামছে লাহোর, বাদ পড়লেন সাকিব রঙিন চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে আজই কি কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ ধোনির? একগুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে নামছেন সিএসকে তারকা বুকে ব্যথা নেই, তবুও হতে পারে হৃদরোগ! চিনে নিন এই মারণব্যাধির ৫টি নীরব লক্ষণ, উপেক্ষা করলেই মৃত্যু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ১১ নেতা, যমুনায় আরও ৯ জন রোগা হওয়ার জন্য কলা খাচ্ছেন না? সত্যি কি এই ফল খেলে ওজন বাড়ে? সঠিক উত্তর জানলে ধারণা বদলে যাবে রাজশাহীতে বিএসটিআই’র অভিযানে অনুমোদনবিহীন বেকারীকে জরিমানা
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি: কবি কাজী নজরুল ইসলামের কর্মময় জীবন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি: কবি কাজী নজরুল ইসলামের কর্মময় জীবন

ওয়ালিউর রহমান বাবু: জাতীয় কাব কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ওপার বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ১১ জৈষ্ঠ্য। বাবা ফকির আহমেদ ধর্ম কর্ম নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন। কবিদের বাড়ির পাশে দীঘির ধারে মক্তবে ভর্তি হবার পর কবি অল্প দিনে আরবি ফার্সী তে পারদর্শী হয়ে উঠেন। বাবা মারা গেলে কবি কে সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়। ইমামতি ও মক্তব্যে শিক্ষকতা করে পাওয়া অর্থ দিয়ে তাদের সংসার চলতে থাকে। কবি দুরন্ত হলেও মন ছিল উদার। চাচা কাজী ফজলে করিমের প্রতিভা কবি কে প্রভাবিত করে। কবি বাংলা ফার্সী মিলিয়ে কবিতা লিখে সকলকে অবাক করে দিলেন। মসজিদের ইমাম, মক্তব্যের শিক্ষক আবার লেটো দলের সাথে সংপৃক্ত থাকায় কবি বিতর্কিত হন।

তবে এ নিয়ে কবি বিচলিত হননি। ইংরেজী বাংলা মিলিয়ে কমিক ও গান লিখেন। হারমোনিয়াম বাজানোও শিখে ফেলেন। অন্যদের কাছে কলকাতার গল্প শুনে যেখানে যাবার ইচ্ছায় বাড়ি থেকে পালিয়ে আসানশোলে রুটির দোকানে ৫ টাকার চাকুরি নেন। রাতে তিনি যখন পুথি পাঠ করতেন তখন ভিড় জমে যেতো। কবির প্রতিভা দেখে সেখানে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা এপার বাংলার ময়মনসিংহের সিমলা গ্রামের রফিজউল্লাহ ১৯১৪ সালে তাকে এপারে এনে দরিরামপুর হাইস্কুলে ভর্তি করে দেন। পরের বছর কবি ভর্তি হন রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ হাইস্কুলে।

দুরন্ত হলেও তিনি স্কুলের নিয়মকানুন মানতেন শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করতেন। বাধাধরা নিয়ম ভালো না লাগলেও পরীক্ষায় প্রথম হতেন। তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সেখানকার জেলা ম্যাজিস্টেট, স্থানীয় লোকজন তাকে সহযোগিতা করতে থাকেন। স্কুলের কাছে একটি বট গাছের নিচে কবি সকলকে নিয়ে আসর ও আড্ডা বসাতেন। তার খরচাদি দিতেন ওবায়দুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি । স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে স্কুল মেসে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কবির লেখালেখিতে হাত সুন্দর হওয়ায় কারো আগমন ও বিদায়ের মান পত্র তাকে দিয়ে লেখানো হতো।

১৯১৬ সালে স্কুলের রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৪ টাকা পুরষ্কার পান। অস্থির কবি সব সময় মাথা উঁচু করে চলতেন। মেট্রিক পরীক্ষা না দিয়ে বিশ্ব যুদ্ধে যোগ দিতে ৪৯ বাঙালি পল্টনে যুক্ত হয়ে করাচি চলে যান। সেখানেও লেখা লেখি থামাননি, ফার্সী পড়তে তার ভাল লাগতো। বাঙালি পল্টনে পদবী পান হাবিলদারের। হাবিলদার পরিচয়ে লিখা লিখি করতেন। তার লেখা “বাউন্ডেলে” “সওগাত” “মুক্তি” বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য প্রত্রিকায় প্রকাশ হলে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। যুদ্ধ থামার পর তার থাকার যায়গা হয় কলকাতায় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্যে পত্রিকা অফিসে। এরপর কলকাতার পার্ক খ্রিষ্টের ৩২ নম্বরে।

১৯২০ সালে ‘নবযুগ’ পত্রিকায় যুক্ত হন কিন্তু পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। বিট্রিশ সরকার চাকুরীর প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখান করে শান্তিপুর থেকে মোজ্জামেল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে আরো বেশি বিখ্যাত হয়ে যান। “বিদ্রোহী কামালপালা“ প্রকাশ হলে ভারত বর্ষ আলোড়িত হয়ে উঠে। তার এই কবিতা ‘বিজলী’ ও ‘সাধনা’ তে ও প্রকাশ হয়। তিনি তার লেখার মধ্য দিয়ে ভারত বাসীকে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখান।
ঢাকার নবাব পরিবারে এক মহিলা ‘মোসলেম ভারতে’ ছাপানোর জন্য একটি ছবি পাঠান।

নৌকার হালে নবীজির চার সাহাবীর নাম সব উপরে নবিজীর নাম। ছবির নিচে কি লিখা হবে তা নিয়ে সবাই ভাবতে থাকলে কবি লিখে ফেলেন ত্রিশ লাইনের ‘খেয়া পাড়ের তরী’ কবিতা। ১৯২২ সালের ১১ আগষ্ট ‘ধুমকেতু’ প্রকাশ হলে ভারত বর্ষে হৈচৈ পরে যায়। ‘ধুমকেতু’ তে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ও কবিতা ছাপা হয়। কবির লেখা ‘অগ্নিবীনা’, ‘ব্যাথার দান’ প্রকাশ হলে ব্রিটিশ সরকার ‘ধুমকেতু’ বন্ধ করে কবিকে গ্রেফতার করে। কবি কলকাতার আলীপুর কারাগারে লিখেন ‘রাজবন্দির জবান বন্দি’। তাকে পাঠানো হয় হুগলি কারাগারে এরপর বহরমপুর কারাগারে । কবি এখানে স্থির থাকতে পারতেন না।

 

বন্দি সঙ্গিদের নিয়ে গান করতনে আসর বসাতেন। জেল কর্তৃপক্ষের আচরনে অনশন করলে শিলং থেকে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিকে অনশন না করার জন্য টেলিগ্রাম করেন কিন্তু কবি টেলিগ্রামটি পাননি। কলকাতা কলেজ স্কোয়ারে দেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সভাপতিত্বে নাগরিক সমাবেশ কবি কে অনশন না করার আহবান জানানো হয়। তার বন্দি সঙ্গিরাও তাকে এ আহবান করেন কিন্তু কবি আনঢ়। কবির মা কবিকে অনশন ভাঙ্গতে পারেননি । অনশন ভাঙ্গান এপার বাংলার কুমিল্লার দৌলতপুরের বিরজা সুন্দরী দেবী। তিনি কবি পত্নী আসালতা সেন গুপ্তা দুলির কাকিমা, কবি তাকে মা বলে সম্বোধন করতেন।

আলী আকবর খানের আমন্ত্রনে কবি কুমিল্লায় এসে লেখেন “দোলন চাপা”, “ছায়ানট” “পূর্বের হাওয়া” “ঝিঙ্গে ফুল”। এর মাঝে কবির জীবনে ঘটে রহস্য জনক ঘটনা। কবি বন্ধু ছিলেন নাট্যকার প্রকাশক সাহিত্যিক। কলকাতা হাজী লেনের বাড়িতে কবির বিয়ে হয় আসালতা সেন গুপ্তা দুলির সাথে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলমান পক্ষ বিপক্ষ তর্ক বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। অনেক নামি দামি ব্যক্তি বর্গ কবিকে ভালোবাসতেন খোঁজ খবর নিতেন। বিয়ের ঘটনার বিতর্কে কবিকে কলকাতা ছেড়ে হুগলি চলে যেতে হয়। কয়েকটি পত্রিকা তার লেখা ছাপা বন্ধ করে দেন। সে সময় কেউ তাকে বাড়ী ভাড়া দিতে রাজী হচ্ছিল না। কবির ইচ্ছা ছিল তার লেখা গুলি দিয়ে বই প্রকাশ করে তা পাঠকের কাছে তুলে দিবেন কিন্তু এটা সম্ভব হয়নি।

 

কবি পুত্র আজাদ কামালের আকিকার দিন খুব আনন্দ হল। কিন্তু সে মারা গেলে কবি বিচলিত হয়ে গেলেও দমেননি। কবি হুগলি ছেড়ে চলে যান কৃষ্ণনগরে। হেমন্ত কুমার সহযোগিতা দিয়ে কবিকে চাঁদ সড়কে সুন্দর একটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এ সময় কবি লিখেন ‘মৃত্যু ক্ষুধা’। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে বলেছিলেন ‘দেখ তোর ভাগ্যে দুঃখ আছে’। সত্যি কবির ভাগ্য ছিল দুঃখে ভরা। বাম নেতা কমরেড মুজাফর আহমেদ ‘লাঙ্গল’ পত্রিকা প্রকাশ করে পরিচালনার দায়িত্ব দেন কবিকে।

তিনি এখানে লিখেন ‘সাম্যবাদী’ কবিতা। কবির চিন্তা ভাবনা ছিল মানুষ এর পর কর্ম। কোন ধর্মকে তিনি উপেক্ষা করেননি ,সকলের মধ্যে মিলন সেতু গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কবি ভাবতেন লিখতেন। লেখায় প্রাধান্য পেতো আল্লাহ রসূল ইসলামী সাহিত্য কবিতা ।আবার হিন্দু ধর্মের দেব দেবীর বন্দনা সঙ্গীত। এ ব্যপারে কবি ছিলেন পারদর্শী। ১৯২৫ সালে এপাড় বাংলার ফরিদপুরে কংগ্রেস সম্মেলনে মহাত্মাগান্ধীর সাথে তার দেখা হলে কবি চরকার গান গেয়ে গান্ধীকে মুগ্ধ করেন। এই সম্মেলনে কবির লেখা নিষিদ্ধ “বিশের বাশিঁ” কাব্য গ্রন্ধ গোপনে বিক্রি হয়। ১৯২৭ সালে কবি ঢাকার মুসলিম সাহিত্যে সম্মেলনে আসেন। আসার সময় তিনি লিখেন ‘আসিলে কেগো আতিথী..। কলকাতার এলবার্ট হলে কবিকে গণ সম্বর্ধনা দেয়া হয়। গাওয়া হল কবির লেখা গান ‘চল চল……।

 

কবিকে উপহার দেয়া হয় রুপার পাত্রে সোনার দেয়াত কলম ।এ অনুষ্ঠানে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু বক্তব্য দেন। কবি গাইলেন ‘বীরদল চল সমরে………., দূর্গম গিরি কান্তার মরু’……’। তারিখটি ছিল ১৫ ডিসেম্বর।

 

শিশু কিশোর দের জন্য তার লেখা কবিতা, ছড়া, নাটক, গল্প, গান, শিশু কিশোর নয় নানা বয়সী দের আকৃষ্ঠ করে। পরের বছর কবি আবারো এই সংগঠনের সম্মেলনে ঢাকায় আসেন। তিনি ঘনিষ্ট হন বহু নামী দামী ব্যক্তির সাথে। ১৯২৯ সালে বিশেষ ব্যক্তিত্ব হাবিবুল্লা বাহার কবিকে চট্রগ্রামে আমন্ত্রণ জানান সবাই আতংকিত কি জানি হয়। কবির পরনে মুসলিম পোশাক। এখানে লিখলেন ‘শিধু হিন্দোল’। কবি সাড়া ফেলে দিলেন সাড়া ভারত বর্ষে। কারণ শুধু মসুলমানরা নয় হিন্দু সম্পদায়ের একটি অংশও কবিকে মেনে নিতে পারছিল না। কবি যখন কৃষ্ণ নগরে ছিলেন তখন তার কিছু ঋণ হয়। কলকাতা এলবার্ট হলে আয়োজক গন নজরুল জয়ন্তী করে সংগ্রহ করা অর্থ দিয়ে কবির ঋণ পরিশোধ করেন।

এপাড় বাংলার রামপুর বোয়ালিয়া ক্ষ্যাত রাজশাহীতে মসুলমান সম্প্রদায় সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিলেন। এ নিয়ে বিশেষ ব্যক্তিত্বরা ভাবতে থাকেন। পরিকল্পনার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজশাহী ক্লাব গঠন করা হয়। এখানে আসার জন্য কবিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কলকাতায় তখন রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মাদারবক্স আইন নিয়ে পড়তেন। (মুসলিম লীগ সরকারের আইন সদস্য, ভাষা সৈনিক, বাম নেতা আতাউর রহমানের শশুর) তিনি সব ব্যবস্থা করে কবিকে আনার জন্য প্রতিনিধি যেতে বললে কয়েক জন সেখানে যান।

কবি রওনা দিলেন সময়টা ডিসেম্বরের মাসের শেষ দিকে। তার সাথে ছিলেন কবি বন্দে আলী মিয়া, কবি শাহাদাৎ হোসেন। প্রফেসর ড. সাকলায়েনের দেয়া তথ্যে জানা যায় ছাত্রনেতা বদরুরজা কবির সাথে ছিলেন, ড. মো: মাহাবুব রহমানের দেয়া তথ্যে জানা যায় কবির সাথে ছিলেন ছাত্রনেতা মো : ওয়াশেক। ড. তসিকুল ইসলাম রাজার দেয়া তথ্যে জানা যায় রাজশাহী জেলা সদরের কাদির গঞ্জের হাজী লাল মোহাম্মাদ সরদারের গাড়িতে করে কবিকে নাটোর থেকে রাজশাহী জেলা সদরে আনা হয়। কবির সফর ছিল তিন দিনের। তিনি কোথায় ছিলেন কোন দিন কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তা নিয়ে ভিন্ন মত আছে। কবির রাজশাহীতে অবস্থান কালে এখানকার মানুষের জেগে উঠার ইচ্ছা শক্তি বেড়ে যায়।

 

কবি রাজশাহী কলেজের ফুলার ভবনে আলোচনা পর্বে তার কণ্ঠে ‘চল চল চল’… গানটি গাইলে রাজশাহী কলেজ চত্ত্বর কেঁপে উঠে। রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘরের পশ্চিমে তৎকালীন বাগধানী কাচারী বাড়ির পশ্চিমের মাঠে দি রাজশাহী মুসলিম ক্লাবের অনুষ্ঠানে কবি বক্তব্য, কবিতা, গান, শুনিয়ে সকরের মন জয় করে নেন। হেতেম-খাঁ চৌধুরী দালানেও গান, কবিতা দিয়ে আসর জমিয়ে দেন। ড. তসিকুল ইসলাম রাজার দেয়া তথ্যে কাদিরগঞ্জে হাজি লাল মোহাম্মদ সরদারের বেলতলা ভবনে গানের আসরে কবি গান গেয়ে কবিতা আবৃত্তি করে সকলকে আনন্দ দেন । প্রমদানাথ টাউন হলে কবিকে নাগরিক সম্বোধনা দেয়া হয়। এই আয়োজনটিও ছিল খুবি প্রানবন্ত। কবি ইতিহাস বিদ অক্ষয় কুমার মৈত্রয়ের সাথে তার অবস্থান স্থলে দেখা করতে গেলে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান। কবি স্বদেশী আন্দোলনের শক্তি ব্যক্তি কান্ত কবি রজনী কান্ত সেনের বাড়ি ও তার সাধনা ক্ষেত্র পরিদর্শন করে নাটোর হয়ে কলকাতায় ফিরেন।

 

১৯৩৩ সাল কবি পুত্র বুলবুল মারা গেলে কবি অসহায় হয়ে যান। বুলবুল গাড়িতে উঠার আবদার করতো কিন্তু কবি তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারেননি। সে সময় কোন গাড়ি চালক বসন্ত রুগির লাশ গাড়িতে নিতো না। এক চালক পাঁচ টাকার বিনিময়ে লাশ গোরস্থানে পৌছে দেয়। কবি বুলবুলের বিছানায় পাশে বসে ইরানী কবি রুবায়েত হাফিজের ৭৩টি কবিতার বাংলা অনুবাদ করেন। গবেষকদের মতে কবির গানের সংখ্যা ৪ হাজার। কবি অভিনিত সিনেমার নাম ‘ধ্রুব’। কলকাতায় কবির গ্রামোফোনের দোকান ছিল। কবিকে জানার শেষ নাই। নানা প্রতিভার ব্যক্তিত্ব কবি কাজী নজরুল ইসলাম মনে প্রাণে ছিলেন অম্প্রদায়িক।

১৯৩৩ সালে তিনি কোরআন শরিফের ২৮ টি শুরা কাব্যে অনুবাদ করে “কাব্যে আমপারা“ নামে প্রকাশ করেন। এক সময় কবি হয়ে গেলেন অন্য রকম ধ্যান ধারনার। ইসলাম ধর্মের পাশা পাশি কালি সাধনায় মগ্ন হন। লিখেন বড় ছোটদের জন্য কবিতা, গান, নাটক, ছড়া। কবির সাথে বহু জনের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সে সময় তাদের সাথে দেখা হতো কথা হতো আলোচনা হতো। একবার তাদের সাথে কথা বলার সময় কবি তাদের বলেন ‘বাঙালির জয় হোক’ সময়টা ১৯৪১ সাল।

কলকাতায় বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির রজত জয়ন্তিতে সভাপতির ভাষনে কবি বলেন ‘বিশ্বাস কর আমি কবি হতে আসেনি প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চির দিনের জন্য বিদায় নিলাম’। কবি ছিলেন অখন্ড ভারতের পক্ষে এবং বিট্রিশ শাষনের বিরুদ্ধে। কবি থেকে গেলেন ওপার বাংলায়। গবেষকদের মতে তার গ্রন্থের সংখ্যা ৫২টি। অসুস্থ কবিকে সুস্থ করতে শত চেষ্টা করেও তাকে সুস্থ করা গেলনা। কবির সে উক্তি ‘বাঙালির জয় হোক’ আমাদের নানা আন্দোলন সংগ্রামে শক্তি যুগায়। বাঙালির জয় হোক কবির সে উক্তি ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সকলকে এক করে মুক্তিযুদ্ধ কে শানিত করে।

 

১৯৭১ সালের ২৫ মে বাঙালি জাতির জন্য একটি উল্লেখ যোগ্য দিন, এই দিন জন্ম গ্রহণ করেন বিদ্রোহ কবি কাজি নজরুল ইসলাম। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নতুন ভাবে কার্যক্রম শুরু করে। বিজয় অর্জনের পর কবি কে ঢাকায় এনে জাতীয় কবির মর্যাদা ও নাগরিকত্ব দিয়ে তার পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আনন্দের মধ্য দিয়ে পালিত হয় কবির জন্ম দিন ।
কবি একটি গানে বলেন তাকে মসজিদের পাশে কবর দিতে। কবির ইচ্ছা অনুয়ায়ী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয়। কবির উক্তি ‘বাঙালির জয় হোক’আবারো নানা আন্দোলন সংগ্রামকে শক্তিশালী করে। তার সে উক্তি আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রেরণা দিবে এই প্রত্যাশা ।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও দি রাজশাহী মুসলিম ক্লাবের সদস্যগণ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষর্থীরা। ছবি ড. মাহাবুবুর রহমান

লেখক,সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজশাহী
মোবাইল : ০১৯১১৮৯৪২৬০


ads



©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.