প্রবাহ ডেস্ক: অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে, কর্তৃপক্ষের আদেশ উপেক্ষা করে ২১ বছর ধরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনেই আছেন স্টেশন মাস্টার (গ্রেড-৩) মো. শফিকুল ইসলাম। আওয়ামীলীগ শাসনামলে কট্রোর আওয়ামীলীগ আর এখন তিনি কট্রোর আওয়ামী বিরোধী। তারা কোন দলের নয়, তারা সুবিধাভোগী। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলামের আদর্শ নিয়ে কথা বলছিলেন চট্টগ্রাম রেলওয়ের (অবঃ) কর্মকর্তা আবুল বাসার। তিনি বলেন শফিকুল ইসলাম একজন অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ ছিলেন। নিজ স্বার্থের জন্য পারেনা এমন হিনো কোন কাজ নাই। টিকিট কালোবাজারির সাথেও জড়িত তিনি।
চলতি বছরের ৮ এপ্রিল তাকে রাজশাহীতে বদলী করা হলেও তিনি তার বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করে চট্টগ্রামে থাকার জন্য উপর মহেল দৌড়ঝাঁপ করছেন।
এ ছাড়া সম্প্রতি স্টেশন মাস্টার শফিকের ভাইরাল হওয়া এক অডিও বার্তায় শুনা গেছে তার বিতর্কিত কথাবার্তা।
অডিও বার্তায় তিনি বলছেন, তিনি তার বদলী ঠেকাতে আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছেন, আগামী ২৬ মে আদলতে তার শুনানি আছে। কার ইন্ধনে তিনি রেলের নিয়োমনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন এই প্রশ্ন স্বয়ং রেলভবনে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১২ মার্চ চাকরি থেকে অবসরে যান চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাফর আলম। স্টেশন মাস্টারের পদটি শূন্য থাকায় এ পদের দায়িত্ব পালন করতেন নানা ইস্যুতে সমালোচিত গ্রেড-৩ পর্যায়ের আরেক স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম। তখন থেকেই গ্রেড-১ পদমর্যাদার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হতে নানা তদবির চালিয়ে আসছে শফিক। এনিয়ে তদবির করতে নিয়মিত ঢাকা আসা-যাওয়া শফিকের।
এর আগে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হিসেবে শফিকুল ইসলামকে পদায়ন করলেও নানা সমালোচনার মুখে তাকে আবারও চট্টগ্রাম ফিরে আনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
গ্রেড-৩ পর্যায়ের বিতর্কিত এক কর্মকর্তাকে চট্টগ্রামের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে পদায়ন করলে রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, গ্রেড-১ পদমর্যাদার কুমিল্লার স্টেশন মাস্টার মাহবুবুর রহমান ও লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন রয়েছেন।রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী ও অভিজ্ঞতা অনুয়ায়ী তারা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হিসেবে পদায়নের যোগ্য। কিন্তু সমস্ত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নানা ইস্যুতে সমালোচিত সেই শফিককে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হিসেবে পদায়ন করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে একটি পক্ষ।
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন। এজন্য কক্সবাজার রেলস্টেশনে মাস্টার হিসেবে শফিকুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছিল।
এরপর ৪ নভেম্বর সকালে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে মাস্টার পদে যোগ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই অনুষ্ঠানের ধারনকৃত নিজের ছবিও দেন তিনি। তবে সেদিন বিকেলেই আবারও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে তাকে ফেরত আনা হয়। জানাযায়, টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে তাকে ফেরত নিয়ে আসা হয়।
রেল সূত্র আরও জানায়, নানান অনিয়মে জড়িত শফিকুল ইসলামকে কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে মাস্টার হিসেবে পদায়নের পর রেলওয়ে অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সে সময় তার বিরুদ্ধে মহাপরিচালক ও পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন দপ্তরে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন রেলওয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। ফলে শফিকুল ইসলামকে তড়িঘড়ি করে কন্ট্রোল অর্ডারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে ফেরত আনা হয়।
এদিকে ২১ বছর ধরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনেই আছেন স্টেশন মাস্টার (গ্রেড-৩) শফিকুল ইসলাম। এর মধ্যে তার বদলির সুপারিশ হলেও ক্ষমতার দাপটে রয়ে গেছেন এক জায়গায়। যা রেলওয়ে আইনের পরিপন্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআরবি এর একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলেন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমরা চায় সেখানে কোনো বিতর্কিত, টিকিট কালোবাজারিকে যাতে পদায়ন করা না হয়।
সূত্র বলছে, ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে সহকারী স্টেশন মাস্টার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন শফিকুল ইসলাম। এরপর টানা চাকরি করে যাচ্ছেন চট্টগ্রামে। এরমধ্যে ২০১০ সালে মীরসরাইয়ে একবার বদলি হলেও সেই স্টেশন বন্ধ থাকায় গ্রেড বাড়িয়ে তাকে আবারও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে রাখা হয়।
এ বিষয়ে জানার জন্য শফিকুল ইসলামকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না। কারণ স্টেশন মাস্টার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সুবক্তগিন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু পূর্বাঞ্চলের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।