নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের সহকারি হাই কমিশনার (রাজশাহী) মনোজ কুমার বলেছেন, উনিশশো একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের দেশপ্রেম, অসীম সাহস এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে; সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তাঁরা (মুক্তিযোদ্ধা) আত্মোৎসর্গ করে আমাদের অতিত রক্ষা করেছেন, আমরা তাদেরই প্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যত গড়তে চাই।”
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে মহানগরীর ভদ্রা এলাকায় রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে “বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব” শিরোনামে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে পঞ্চ প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন মনোজ কুমার। পরে রাজশাহী জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানানো হয়।
এসময় সেখানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন ভারতের সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান ও নাটক মঞ্চস্থ হয়।
বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ভাষা তথা বাঙালি সংস্কৃতির বিশ্বব্যাপী তাৎপর্য তুলে ধরে ভারতের এই কুটনীতিক বলেন, বাংলা ভাষা ও তাঁর সংস্কৃতি সারা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। বাংলা সংস্কৃতি পুরো বিশ্বকে অনেক কিছু দিয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অমর্ত্য সেনের মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব বিশ্বকে যা দিয়েছেন, তা বাঙালি সংস্কৃতিকে আরও বেশি শক্তিশালী করেছে। বাংলা শুধুমাত্র একটি ভাষা নয়, এটি সম্পূর্ণরূপে ‘ঐতিহাসিক’ বিষয়। বাঙালির ইতিহাস নিয়ে কেবলমাত্র বাংলাদেশ, ভারত বা দক্ষিণ এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বই গর্ববোধ করে।
সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার আরও বলেন, ভারত এবং ভারতের জনগণ বাংলাদেশের জনগণের আত্ম সামাজিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয়ে সবসময় সাথে আছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভাষাগত মিল রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত শুধু প্রতিবেশী দেশ না, এগিয়ে চলার বন্ধুও। দুই দেশের জনগণের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ বলেন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বসবাসের সময় একজন ভালো প্রতিবেশী যেভাবে একে অপরের পরিপূরক হয়ে বসবাস করে, ঠিক সেভাবেই ভারত-বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে আমরাও একসঙ্গে পথ চলতে চাই।
বক্তব্য দিতে গিয়ে রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খোকা বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে এদেশের নিরস্ত্র মানুষ যখন দিশেহারা, তখন মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ভারত। তাদের প্রশিক্ষণ নিয়েই আমরা যুদ্ধে যাই। ছিনিয়ে আনি বিজয়। সেদিনও মৌলবাদী শক্তি সক্রিয় ছিল। তাঁরা সবসময়ই আমাদের কাছে পরাস্ত হয়েছে। এখনো তাদের পরাস্ত করে এগিয়ে যেতে হবে।
আলোচনায় আরও অংশ নেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) নাসিদ ফরহাদ। এসময় রাজশাহীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।