প্রবাহ ডেস্ক: বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও ইউএনএইচসিআরের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার ফর অপারেশন্স রাউফ মাজো।
সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে স্টেকহোল্ডার ডায়ালগ অন রোহিঙ্গা সিচুয়েশন অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, আট বছর আগে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ লাখ।
রাউফ মাজো বলেন, বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। স্থানীয় জনগণ কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তবে সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় প্রয়োজনীয় অর্থায়ন জোগাড় করা এখন ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
তিনি জানান, চলতি বছরের যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হলেও সেপ্টেম্বরে পর এলপিজি সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক সেবা এরইমধ্যে কমে গেছে।
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনই সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সমাধান, আর এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব মিয়ানমারের।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে বর্তমানে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং গত ১৮ মাসে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। এই সম্মেলনে টেকসই সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার রূপরেখা তৈরি হবে।
রাউফ মাজো বলেন, বাংলাদেশ একটি বৈশ্বিক জনসেবার দায়িত্ব পালন করছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা। ১১ লাখ মানুষের সংকটকে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতায় পরিণত হতে দেয়া যাবে না।
তিনি উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে আরও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান, যেন রোহিঙ্গারা ভবিষ্যতে নিজ দেশে ফিরে পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।