প্রবাহ ডেস্ক: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে সোমবার (১১ আগস্ট) মালয়েশিয়া যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এই সফরে ৫টির মতো সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পাবলিক ডিপ্লোমেসি) শাহ আসিফ রহমান জানান, ১২ আগস্ট পুত্রযায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, গভীর সমুদ্রের সঠিক ব্যবহার, কৃষি ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মালয়েশিয়া ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে খাজানার সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহযোগিতা, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আহ্বান করা হবে।
তিনি বলেন, সমুদ্রের ৪০-৫০ কিলোমিটারের মধ্যে আমরা মাছ আহরণ করি। অথচ সমুদ্রের সীমানা প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের সীমানার চেয়ে বেশি। এখানে প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দিতে চাইছেন। এর আগে জাপান সফরেও প্রধান উপদেষ্টা অনেক কথা বলেছেন।
এছাড়া প্রোটন হোল্ডিংসের সঙ্গে ইলেকট্রিক যানবাহন উৎপাদন সম্ভাবনা এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি এক্সিয়াটার প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠকও সূচিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রোটন হােল্ডিংস ইলেকট্রিক যানের ওপর অনেক ইনভেস্ট করছে। বাংলাদেশেও ইভি ম্যানুফেক্চার করা যায় কি না, করলেও কেমন সহযোগিতা করতে পারি, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।
সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাকবেন। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হতে পারে। সেখানে তারা মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোয় জটিলতা নিরসনের বিষয়ে কথা বলবেন।
শফিকুল আলম বলেন, বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বেশ কয়েকটি বিজনেস কনফারেন্সে বক্তব্য রাখবেন। আমরা আশা করছি এই সফর সফল হবে। আমাদের দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় অনেকে পড়তে যায় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাদের ভালো চাকরি হয় না। এ বিষয়টা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
মালয়েশিয়ায় শ্রম বাজারের সিন্ডিকেট বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা একটা স্ট্রাক্চারাল ইস্যু। এখানে অনেক বিষয় জড়িত। ড. আসিফ নজরুল শুরু থেকেই এটা নিয়ে কনসার্ন আছেন। আমরা আশা করছি সামনে এটা আরও বেটার জায়গায় যাবে।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত এপ্রিল মাসে মালয়েশিয়া সরকার প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টাকে এক চিঠিতে জানিয়েছিল যে ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশটিতে যাওয়া কিছু বাংলাদেশি শ্রমিকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও মানবপাচারের মামলা রয়েছে। প্রমাণহীন এসব মামলা প্রত্যাহার না হলে শ্রমবাজার বিষয়ে তারা আর এগোবে না বলেও সতর্ক করেছিল।
এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রী (প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা) ভালো বলতে পারবেন, কারণ চিঠিটি আমি দেখিনি।
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা সন্দেহে আটক বাংলাদেশিদের বিষয়ে প্রেস সেক্রেটারি বলেন, দুই দেশের পুলিশের মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছে। এখন থেকে যে কোনো ধরনের তথ্য যাতে যাচাই-বাছাই করা যায় এবং দ্রুত তথ্য শেয়ার করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়গুলো দুই দেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত বছরের অক্টোবরে ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।