প্রবাহ ডেস্ক: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, আমরা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সংসদে জনগণের পক্ষে কথা বলেছিলাম। কিন্তু পরক্ষণে তৎকালীন সরকারের চাপে তাদের পক্ষে বলতে হয়েছে। আমি মনে করি, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের কাছে জিম্মি হয়ে সার্কাস পার্টি হয়েছিল জাতীয় পার্টি। তখন সঙ্গে থাকা কয়েকজন সরকারের পক্ষ নিয়ে আমাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন। আমি তাদের বহিষ্কার করেছি।
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুরে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, আমি আওয়ামী লীগের আমলে বলেছিলাম, বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়া নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। সেই নির্বাচন দেশে ও দেশের বাইরে সমর্থন পাবে না। এই সরকারকেও বলবো, আওয়ামী লীগ বর্তমানে আধামরা অবস্থায় আছে, তারপরও আপনি আওয়ামী লীগকে ভয় পাচ্ছেন।
জুলাই আন্দোলন প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলাম। রংপুরে জাতীয় পার্টির দুইজন মারা গেছেন। কয়েকজন জেল খেটেছেন। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। আমাদের মেয়রকে তৎকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সামনে হেনস্তা করা হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মানুষ বাড়ি থেকে বের হয়ে পুনরায় ফিরতে পারবে কিনা সংশয় তৈরি হয়েছে, অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যারা মব তৈরি করে লুটপাট ও পেশীশক্তি দেখিয়েছে এতদিন, তারা আর তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগাতে না পারলে মব দিয়ে নির্বাচন করবে এই সরকার। সেই মবের নির্বাচন কী সমর্থন পাবে? আমরা চাই, একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার দেশ চালাবে।
সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দাবি করে জি এম কাদের বলেন, সংস্কার ও বিচার একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। বিচারের জন্য আপনি ৫০ বছর অপেক্ষা করতে পারেন না। এই সরকারের সংস্কার কেউ গ্রহণ করছে না। নারী সংস্কার, এনবিআর সংস্কার, মিডিয়ার সংস্কার কেউ গ্রহণ করেনি। কারণ, তারা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলকে অর্থাৎ ৫০ ভাগ লোককে বাদ দিয়ে সংস্কারের কথা বলছেন। একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছেন তারা।
আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। অন্যান্যের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর জাতীয় পার্টি সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আজমল হোসেন লেবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এর আগে, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবর জিয়ারত করেন জিএম কাদের।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মৃত্যুবরণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে জাতীয় পার্টি ও দলের অঙ্গ সংগঠনগুলো।