সোমবার | ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৫০৫ জন রেলওয়ে প্রকল্প গেইট কিপারদের ভবিষ্যত আন্ধকারে

১৫০৫ জন রেলওয়ে প্রকল্প গেইট কিপারদের ভবিষ্যত আন্ধকারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকারের সেবামূলক যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে, চুক্তিভিত্তিক বা অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানগুলো চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিটা সেক্টরে রয়েছে চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী টি এল আর শ্রমিক। একজন শিক্ষিত বেকার যুবক যখন চাকরির জন্য চারিদিকে ছুটাছুটি করেও চাকরি না পায় তখন বাধ্যহয়ে অস্থায়ীভিত্তিতে চাকরিতে প্রবেশ করে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রম আইনে, অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী বা রাজস্ব করার বিধান রয়েছে। এই আশায় অনেকেই অস্থায়ী চাকরিতে প্রবেশ করে। ফলাফল তাদের ভবিষ্যত জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে। বছরের পর বছর একটানা চাকুরি করেও আইনি জটিলতায় চাকুরি রাজস্ব করণ তো দূরে থাক, সময়মতো বেতনও পায় না।

তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে ১০৩৮ জন ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ৮৫১জন মোট ১৮৮৯ জন অস্থায়ীভাবে প্রকল্প গেট কিপার নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে। সারা দেশ থেকে কয়েক লক্ষ বেকার যুবক এই চাকরির জন্য আবেদন করে।

চাকরিটি অস্থায়ী হলেও, এই চাকরিতে কিছু নতুন করে শর্তাবলি দেয়া হয়, যেমন রেলের বিদ্যমান নিয়োগ গুলো যেভাবে সম্পন্ন করতে গেলে নিয়োগ পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন, মেডিকেল, সকল কার্যক্রম অনুসরণ করেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
চাকরি শুরুতেই প্রথমেই পশ্চিমাঞ্চল রেলের গেট কিপারদের ৭ মাস বেতন বন্ধ থাকে। গেটকিপাররা তাদের বেতনের দাবিতে রেলভবনে মানববন্ধন করলে তাদের বেতন পরিশোধ করে রেলকতৃপক্ষ।

রেলওয়ে কতৃপক্ষ বলছে, অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত শ্রমিকরা যখন একটানা তিন বছর চাকুরি করে তখন তাদের রাজস্ব করা না হলে, তখন তারা চাকুরি রাজস্ব করনের জন্য আদালতে মামলা করে। আর এই মামলা চলমান থাকাকালীন সময়ে ঐপদের কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে কঠিন হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের গেট কিপার পদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। রেলওয়ে ট্রেনগুলো দুর্ঘটনামুক্ত চলাচল করার জন্য গেট কিপার অত্যান্ত জরুরী। তাই তারা নতুন করে স্থায়ীভাবে গেট কিপার নিয়োগ না দিতে পেরেই, অস্থায়ীভাবে প্রকল্প গেট কিপারদের নিয়োগ দেন।

নিয়োগ দেয়ার সময় কতৃপক্ষ তাদেরকে আশ্বাস দেয়, কিছুদিনের ভিতর তাদের চাকুরি রাজস্ব করন করা হবে। ফলে রাজস্ব করনের মুলার দিকে তাকিয়ে বেতন বিহীন দীর্ঘদিন চাকরি করতে থাকে।

জানাগেছে, রেল পথ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গেট কিপারদের চাকরি রাজস্ব করার জন্য একের পর এক ফাইল চালাচলি করতে থাকে।
এভাবেই ২০১৮ সাল থেকে ২০ সাল, ২১ সাল, ২২ সাল, ২৩ সাল, ২৪ সাল পর্যন্ত (৭ বছর) ধরে প্রতিবছর জুনেই তাদের চাকরির রাজস্ব হয়ে যাচ্ছে এমনটাই তাদেরকে আসস্থ করেন রেল কতৃপক্ষ।
রাজস্বকরণের মুলার দিকে তাকিয়ে প্রকল্পের গেট কিপার দের সরকারি চাকুরীর বয়স অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী গেইটকিপারেরা জানায়, ২০২৩ সালে ১৫০৫জন গেট কিপারকে সরাসরি রাজস্বখাতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আবারো রেলপথ মন্ত্রণালয় আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। সেখানে শর্ত দেয়া হয়,গেইটকিপারে একটানা দুই বছর কাজ করার অভিজ্ঞতারাই শুধুমাত্র আবেদন করতে পারবে।আর তাদের অভিজ্ঞতার সনদ দিবেন দুই অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক ও মহাব্যাস্থাক স্বাক্ষরিত।

গেইটকিপাররা নিশ্চিত হয়েছিল এবার তাদের চাকরি নিশ্চিত রাজস্ব হচ্ছে। তাদের আবেদন পত্র ঢাকা রেল ভবনে নির্ধারিত বাক্সে জমা দেন। কিন্তু কিছুদিন পরে জানা যায় নিয়োগটা বাতিল হয়ে গেছে। কেন বাতিল হলো, কি কারনে হলো, কাদের কারনে হলো তা স্পস্ট করেনি রেলকতৃপক্ষ।

সর্বশেষ ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের পর, প্রকল্প গেট কিপারেরা তাদের চাকরি রাজস্ব করনের আশা নিয়ে মন্ত্রনালয় ও রেলভবন অবরোধ করে। তখন কতৃপক্ষ রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া এবং প্রকল্প গেট কিপারদের নিয়োগ সম্পর্কে তাদের প্রয়োজনীয়তা এবং রাজস্ব করণের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে স্মারকলিপি দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোন স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টা বারবার পাঠাননি রেলভবন বা রেল মন্ত্রনাল।

বর্তমানে ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের গেট কিপারের ৪০% শ্রমিকদের বিদ্যমান চাকরির বয়স শেষের দিকে, এখন তারা কি করবে, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে রেল পথ মন্ত্রণালয়ে যে তাদের ভবিষ্যত জীবন নষ্ট করলো এর দায়ভার কে নেবে?

গেইট কিপারেরা বলছেন, এখন একসাথে ১৫০৫ জন গেট কিপারের মৃত্যুবরণ করা ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। তখন তারা, রেলওয়ের সচিব এবং ডিজি মহাদয়ের আন্তরিকতায়, অনেকটাই আশার আলো দেখেছিল এখন সেই আশা গুড়ে বালি হয়েগেছে। তাদের দাবি, দয়া করে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচানোর জন্য ও তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে প্রকল্পের গেট কিপারদের চাকরিটা রাজস্ব করে দিবেন।

সেই সাথে তারা প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে তাদের মত কারো জীবন যেন আর নষ্ট না করা হয়।


ads



©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.