প্রবাহ ডেস্ক: উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার এক নীরব ঘাতক। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও উপসর্গ দেখা না দিলেও, ভিতরে ভিতরে ক্ষয় করতে থাকে হৃদয়, কিডনি, এমনকি মস্তিষ্ককেও। অনেকেই ভাবেন, শুধুমাত্র অতিরিক্ত নুন খাওয়া বা বংশগত কারণেই এই সমস্যা হয়। কিন্তু বাস্তবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ অভ্যাসও অজান্তেই রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। জেনে নিন এমনই পাঁচটি দৈনন্দিন অভ্যাস, যেগুলি বদল না আনলে হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়বে।
#. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
সকালে এক কাপ কফি না হলে দিনই শুরু হয় না? কিংবা পড়ার টেবিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চা-কফি চলছেই? সাবধান। ক্যাফেইন সাময়িকভাবে মস্তিষ্ককে চাঙ্গা করলেও, একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ হঠাৎ করে সিস্টোলিক রক্তচাপ ১০-১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘমেয়াদে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
#. অপর্যাপ্ত ঘুম
রাত জেগে সিরিজ দেখেন? কিংবা অতিরিক্ত কাজের চাপে তিন-চার ঘণ্টার বেশি ঘুমনোর সময় পান না? শরীর কিন্তু এই অনিয়ম সহজে মেনে নেবে না। ঘুম পর্যাপ্ত না হলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা সরাসরি রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা নিয়মিত ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের হাইপারটেনশনের আশঙ্কা দ্বিগুণ।
#. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা
ওয়ার্ক ফ্রম হোম সংস্কৃতিতে ল্যাপটপের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো এখন নিত্যদিনের চিত্র। অথচ, এই স্থিতধী জীবনযাপন রক্তচাপের এক অন্যতম অনুঘটক। রক্ত সঞ্চালনের গতি কমে গেলে হৃদয়ের ওপর চাপ বাড়ে, যার ফল-উচ্চ রক্তচাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তত ৫ মিনিট হাঁটাচলা করা উচিত।
#. লবণের অতিরিক্ত ব্যবহার
চটপটি, মুড়ি, আলুভাজা কিংবা রেস্টুরেন্টের প্রিয় বিরিয়ানি-সর্বত্রই লুকিয়ে থাকে ‘সোডিয়াম’, যায় মূল উৎস লবণ। অতিরিক্ত নুন শরীরে জল ধরে রাখে, যার ফলস্বরূপ রক্তনালীর চাপ বাড়ে। দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণ ৫ গ্রামের মধ্যে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা, যা মাত্র এক চামচ লবণের সমান। কাজেই তার বেশি লবণ খেলেই বাড়বে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি।
#. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মন যদি ভাল না থাকে, শরীরও ভাল থাকে না-কথাটা শুধু কথার কথা নয়। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়ানোর অন্যতম বড় কারণ। কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা বাড়লে রক্তনালীগুলি সঙ্কুচিত হয়, হৃদপিণ্ডকে বেশি জোরে কাজ করতে হয়, ফলে রক্তচাপও চড়চড় করে বাড়ে। নিয়মিত ধ্যান, প্রাণায়াম কিংবা মনপ্রাণ জুড়ানো সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা প্রয়োজন। নইলে বাড়তে পারে রক্তচাপ।
ছোট ছোট অভ্যাসে বদলই পারে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। প্রতিদিনের চা-কফির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, সময়মতো ঘুম, মাঝেমাঝে উঠে হাঁটা, খাবারে লবণের পরিমাণ কমানো এবং মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষা-এই পাঁচটি সহজ অভ্যাসই হতে পারে রক্তচাপ কমানোর চাবিকাঠি।