রবিবার | ১লা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খোলা তেলে অদৃশ্য বিষ : খাচ্ছি না, তবুও খাচ্ছি!

খোলা তেলে অদৃশ্য বিষ : খাচ্ছি না, তবুও খাচ্ছি!

প্রেবাহ ডেস্ক: আমি তো খোলা তেল খাই না’ এই কথা এখন ঘরে ঘরে শোনা যায়। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত সবার পছন্দের তালিকায় এখন বোতলজাত তেল। কিন্তু স্বাস্থ্য-সচেতনতার এই ‘কমিটমেন্টে’র মধ্যেও প্রায় প্রত্যেকের শরীরে ঢুকছে ‘অস্বাস্থ্যকর’ খোলা তেল। যা গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোটেল, ফাস্টফুড দোকান অথবা সড়কের পাশের পিঁয়াজু-চপ-শিঙাড়ার ঝালঝাল স্বাদ বা মুখরোচক প্রায় সব খাবারেই ব্যবহার করা হচ্ছে খোলা তেল। আপনি ‘অস্বাস্থ্যকর’ ভেবে খোলা তেল খাচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু নিজের অজান্তেই প্রতিদিন বাইরের খাবারের সঙ্গে সেই খোলা তেল গ্রহণ করছেন। বাসা-বাড়িতে রান্নায় আপনি যত ভালো তেলই ব্যবহার করুন না কেন, বাইরের প্রতিটি খাবারের মাধ্যমে আপনার শরীরে ঢুকছে সেই পুরোনো, অপরিশোধিত ও বারবার ব্যবহৃত তেল।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, খোলা তেলে একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতির ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি পরিশোধিত না হওয়া অথবা বারবার ব্যবহৃত তেলের ক্ষতিকর উপাদান স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এ অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং মাঠপর্যায়ে নজরদারির দুর্বলতাকে দায়ী করা হচ্ছে।

হোটেল, খাবারঘর ও রেস্তোরাঁয়গুলোতে প্রতিদিন দেদারসে ব্যবহৃত হচ্ছে খোলা ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেলে রান্না করা খাবার। এমনকি প্রায় সব দোকানেই একই তেল নিয়মিত একাধিকবার ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ হোটেলে রান্নাঘরের একপাশে টিনের পট ও ড্রামে করে রাখা তেল ভাজাপোড়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আগের দিনের ব্যবহৃত তেল পুনরায় গরম করে পরোটা, বেগুনি ও ডিম ভাজার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভোক্তারা জানতেও পারছেন না তাদের পরিবেশিত খাবারে ব্যবহৃত তেল আদৌ সরকার নির্ধারিত মান মেনে চলছে কি না।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্র মিলেছে স্থানীয় চানাচুর ও খোলা স্ন্যাকস প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোতে। বেশিরভাগ ছোট কারখানা নিয়মিত খোলা তেল কিনে বড় ড্রামে রেখে দিনের পর দিন সেসব তেলে ভাজাভুজি করছে। একটি শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যার চানাচুর বিভিন্ন ছোট দোকানে বিক্রি হয়, তার তেলের উৎস জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।

জীবনযাপনে স্বাস্থ্য-সচেতনতার প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে এখন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তেলের ব্যবহার প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাসায় রান্নার সময় তারা তেলের মান, প্যাকেজিং, এমনকি ফোর্টিফিকেশনের বিষয়েও নিশ্চিত হতে চান। কিন্তু ঘরের বাইরে পা রাখলেই সেই সচেতনতা যেন শহরের কোলাহলে মিলিয়ে যায়। খাবারের স্বাদ ও দাম নিয়েই যখন এত ভাবনা, তখন তেল কোথা থেকে এসেছে সেটা আর মনে থাকে না।

রিফাত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। দুপুরে এক ছোট রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় বলেন, ‘সত্যি বলতে, বাসায় আমি আর আমার স্ত্রী খুবই সচেতন। বাজার থেকে প্যাকেটজাত তেল ছাড়া কিছু কিনি না। আমরা রিফাইন্ড সয়াবিন তেল নেই, খেয়াল করি ফোর্টিফাইড কি না। কিন্তু অফিসের সময় বাইরে যেটা খাই, ওই রেস্টুরেন্টে তেলটা কীভাবে এসেছে বা কী মানের সেটা ভাবার সুযোগ হয় না। পেট তো চায় খাবার, সময়ও থাকে না।’

গৃহিণী ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘ঘরে খোলা তেল ঢোকাই না। আমার দুই ছেলে-মেয়ে আছে, ওদের স্বাস্থ্য নিয়ে খুব চিন্তিত থাকি। কিন্তু ওরা যখন টিউশন বা কোচিং শেষে রোল-সমুচা খায় বা আমি যখন চানাচুর কিনে দেই তখন একবারও মাথায় আসে না যে এসব জিনিসে কী তেল ব্যবহার হচ্ছে। আসলে আমরাই না জানার ভান করে থাকি।’

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফারহানা তাবাসসুম বলেন, ‘আমার মা বাসায় সবসময় বোতলের তেলেই রান্না করেন। এমনকি সেগুলো স্বাস্থ্যকর কি না, সেটাও দেখে নেন। কিন্তু আমি তো প্রায় প্রতিদিনই বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খাই, কখনও স্ট্রিট ফুড খাই। সত্যি বলতে কী, সেসব খাবারে ব্যবহৃত তেল নিয়ে কোনো প্রশ্ন করি না। খেতে ভালো লাগে বলেই খাই। এখন ভাবছি, এটা কতটা ভয়ংকর হতে পারে!’

ভোক্তারা ঘরের ভেতরে যতটা সচেতন, বাইরে ততটাই উদাসীন। যার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। মানহীন, অস্বাস্থ্যকর এমনকি বারবার ব্যবহৃত খোলা তেল ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে ফাস্টফুড, চানাচুর, পরোটা, হালুয়া-পুরি। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক, সবাই এসব খাবারের ভোক্তা। অথচ এসব তেলের অনেকটিতেই নেই সরকার নির্ধারিত ভিটামিন ‘এ’ ফোর্টিফিকেশন, নেই পরীক্ষিত উৎস বা সঠিক প্যাকেজিং।

চিকিৎসকদের মতে, এই তেলের মাধ্যমে শরীরে প্রতিদিন ঢুকছে অপুষ্টি। এছাড়া চোখের ক্ষতি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখন ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতিকে এক নীরব মহামারি হিসেবে দেখছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে এই ঘাটতির প্রভাব ভয়াবহ। বাংলাদেশও এই সংকট থেকে মুক্ত নয়। রাতকানা, চোখের শুষ্কতা, কর্নিয়ার ক্ষয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা, সবই ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতির বহিঃপ্রকাশ। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের মধ্যে রক্তশূন্যতা, বারবার অসুস্থ হওয়া এমনকি অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

২০১১–১২ সালের জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ২০.৯ শতাংশ স্কুলগামী শিশু ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতায় ভুগছে। জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, ভারতে প্রাক-প্রাথমিক বয়সী প্রায় ৬২ শতাংশ শিশু এই ঘাটতিতে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার শিশুর মৃত্যু এই কারণেই হয়। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়ও এই সমস্যা প্রকট।

স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় অনেক দেশ ইতোমধ্যে খাদ্যপণ্য বিশেষত ভোজ্যতেলকে বাধ্যতামূলকভাবে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভারত ২০১৮ সালে ফুড ফোর্টিফিকেশন রিসোর্স সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভোজ্যতেলসহ পাঁচটি প্রধান খাদ্যপণ্যে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সংযোজন শুরু করে। বাংলাদেশও ২০১৩ সালে আইন এবং ২০১৫ সালে বিধিমালার মাধ্যমে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ফোর্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করে।

তবে বাস্তবতা হলো, এই আইন মানার প্রবণতা নেই অনেক উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। বিশেষ করে খোলা তেলের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক। খোলা ও অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করে তৈরি হওয়া খাবার যা প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ রাস্তাঘাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ বা মিষ্টির দোকানে গ্রহণ করছে তাতে ভিটামিন ‘এ’ থাকে না বললেই চলে। এই খাদ্যাভ্যাসই জনগণের ভেতরে একটি নীরব পুষ্টিহীনতা গড়ে তুলছে।

দেশের প্রখ্যাত কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম খোলা তেল ও অস্বাস্থ্যকর উপাদানে ভাজা খাবারকে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে কেনা খাবারে নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান মেশানো হয় যেমন- শরীরের জন্য বিপজ্জনক কেমিক্যাল, রং, প্রিজারভেটিভ কিংবা ফরমালিন। এসবের সঙ্গে থাকে অস্বাভাবিক পরিমাণে তেল, যার একটি বড় অংশই খোলা ও বারবার ব্যবহৃত অপরিশোধিত তেল। এসব তেল শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে লিভার ও কিডনিতে দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতি করে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এসব খাবার শুধু অস্থায়ী অস্বস্তি নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি করে। একপর্যায়ে এগুলো দুরারোগ্য রোগ যেমন- কিডনি ফেইলিউর, হেপাটাইটিস বা ক্যানসারের মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই বিপজ্জনক চক্র থেকে মুক্ত থাকতে হলে আমাদের বাইরের এসব মুখরোচক কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ খাবার বর্জন করতে হবে এবং ঘরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি খাবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।’

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী সতর্ক করে বলেন, “ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’-এর ঘাটতির কারণে দেশে শিশুদের মধ্যে অন্ধত্ব, হাড়ক্ষয় ও হৃদরোগের মতো শারীরিক সমস্যা বাড়ছে। এই স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের বাজার থেকে ড্রামের খোলা তেলের অবাধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে ভিটামিন সমৃদ্ধ ব্র্যান্ডেড তেলের সহজপ্রাপ্যতা।”

‘আমরা বাসার খাবারে যতই সচেতন হই না কেন, বাইরের খাবার থেকেই এখন সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব খাবারে ব্যবহার করা হয় খোলা ও বারবার ব্যবহৃত তেল, যা ফোর্টিফায়েড তো নয়ই বরং চরম বিষাক্ত। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকিও তৈরি হয়।’

বিশেষজ্ঞরা একমত যে, শুধু আইন করলেই হবে না, বাস্তবায়ন এবং তদারকি না থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে। কারণ, এই ‘নীরব ঘাতক’ শরীরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলেন, “বর্তমানে দেশে প্রচলিত অনেক বোতলজাত সয়াবিন তেলেই অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া যাচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। একইসঙ্গে খোলা ও অপরিশোধিত তেলের সহজলভ্যতা এবং নিয়মিত ব্যবহারের ফলে বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’-এর ঘাটতির আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।”

সমাধানের পথ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দুটি স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় কেবল আইন তৈরি করলেই চলবে না, এর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিএফএসএ ও বিএসটিআইসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও মানবসম্পদ বাড়াতে হবে। তদুপরি, গবেষণার মাধ্যমে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর প্রযুক্তি ও কৌশল খুঁজে বের করার কাজ আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি।’

অন্যদিকে, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “সরকার ইতোমধ্যে খোলা তেলের বাজারজাত নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না। ড্রামের মতো অস্বাস্থ্যকর প্যাকেজিংয়ে তেল বিক্রি এখনও অব্যাহত আছে, যা আলো ও বাতাসে সংস্পর্শে এসে ভিটামিন ‘এ’ ধ্বংস করে ফেলছে এবং তেলকে বিষে পরিণত করছে।”

তিনি সুপারিশ করেন, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের খাদ্য-গ্রেড বোতল বা প্যাকেট ব্যবহার করতে বাধ্য করতে হবে। রিফাইনারিগুলোকে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’-এর নির্ধারিত মাত্রা বজায় রেখে তেল প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। একইসঙ্গে সরকারকে নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি ভোক্তা ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এই তেল শরীরে কীভাবে পুষ্টি না দিয়ে ধীরে ধীরে রোগ তৈরি করে, সেটিও সবাইকে বোঝাতে হবে।”

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “খোলা তেল বিক্রি নিষিদ্ধ নয়, এটাই মূল সমস্যা। আইন আছে শুধু তখনই যখন ভিটামিন ‘এ’ না থাকলে বা তেল দূষিত হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু চোখে দেখা যায় না তেলটি ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ কি না, অথবা আগেই ব্যবহৃত হয়েছে কি না। ফলে প্রমাণ না থাকলে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”

তিনি বলেন, ‘অভিযানের পর সন্দেহভাজন তেলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাতে হয়। ফল আসতে অনেক সময় লেগে যায়। ততদিনে সেই দোকান হয়তো আর খোলা থাকে না বা দোকানদার নম্বরই বদলে ফেলে। ফলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।’

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) উপপরিচালক (সিএম) এস এম আবু সাঈদ বলেন, “আমাদের বিদ্যমান আইনে বলা আছে, বাজারজাতকৃত প্রতিটি ভোজ্যতেলেই অবশ্যই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ থাকতে হবে। তেলের মান নির্ধারণ ও পরীক্ষার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিভিন্ন খুচরা দোকান, রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানে এখনও যেসব তেল ব্যবহার হচ্ছে, তার অধিকাংশই খোলা ড্রামের তেল, যেগুলোর কোনো মান যাচাই হয় না।”

তিনি বলেন, খোলা তেল সরাসরি জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তাই এই তেলের বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করা প্রয়োজন। আমরা বারবার ব্যবসায়ীদের বোঝাচ্ছি, কিন্তু কঠোর নজরদারি ছাড়া এটা কার্যকর হচ্ছে না।


©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.