নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ও ঢাকার পান্থকুঞ্জ হাতিরঝিল রক্ষায় সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৩০ মে) নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও সবুজ সংহতি রাজশাহীর আয়োজনে এ সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা ও বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসরামের সভাপতিত্বে ও বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক এর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন রাজশাহী প্রেসক্লাব এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন কর্মী ওয়ালিউর রহমান বাবু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি উপেন রবিদাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহীতে নির্বিচারে বৃক্ষহত্যা ও পুকুর হত্যার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। গত বছরের নভেম্বরে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস লিজ নেয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তথ্য অধিকার আইনে প্রাপ্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী প্রাণ-আরএফএল রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের প্রায় চার শতাধিক বৃক্ষ হত্যা করেছে এবং টেক্সটাইল মিলের ভেতরে অবস্তিত একটি পুকুর হত্যা করেছে। যদিও গত ২৮ জানুয়ারি এক রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে উচ্চ আদালত গাছ কাটার ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছেন।
কিন্তু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ হাইকোর্টের সেই আদেশকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করেছেন। এভাবে প্রতিনিয়ত পরিবেশ হত্যার মহোৎসব চললেও পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। তাদের কাছে পুকুর ভরাট বা এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ নিয়ে গেলে খুব চমৎকার কথা বলে তারা আশ্বাস দেন ঠিকই কিন্তু পরে আর তেমন পদক্ষেপ দেখা যায় না।
শান্তির শহরখ্যাত রাজশাহীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ। বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন সেচ্ছাসেবী সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী বিগত ১০ মে ২০২৫ (শনিবার) গড় শব্দের মাত্রা ছিল ৯৭.২ ডেসিবেল যা ২০২২ সালে ছিল ৯০ ডেসিবেল। রেলগেট এলাকায় গত চার বছরে শব্দের মাত্রা বেড়েছে ৭ ডেসিবেলের বেশি। বিগত ২০২২-২০২৪, তিন বছরে নগরে বায়ুদূষণ বেড়েছে ৪৭ মাইক্রোগ্রাম বা ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। নেই সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আশংকাজনকভাবে সড়কে অরাজকতা, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ বাড়লেও নেই প্রয়োজনীয় তৎপরতা ও ব্যবস্থাপনা।
অন্যদিকে, বৈষম্যমূলক, পরিবেশ ছাড়পত্রবিহীন, নাগরিক অধিকারহরণকারী এবং রাষ্ট্রীয় অপচয়ের উদাহরণ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি শুরু থেকেই দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা, পরিবেশগত সংকট এবং জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যমান পরিবেশ, জলাধার কিংবা প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা নীতি ও আইন লঙ্ঘন করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিরঝিলের জলাধার ভরাট করে এর শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে এবং পান্থকুঞ্জের প্রায় ২০০০ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জে নির্মাণকাজ পরিচালনা করার জন্য কোন পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধার রক্ষার আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বহু মানুষ এবং সংগঠন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিনজন উপদেষ্টা সেখানে পরিদর্শন করে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিলেও এর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি কোন আলোচনা হয়নি কোন সমাধান।
আজ আন্দোলনের ৬ষ্ঠ মাস – ১৬৮ তম দিনে রাজশাহীর এ সংহতি সমাবেশ থেকে দেশব্যাপি সকল উন্নয়ন প্রকল্পকে পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে জবাবদিহির আওতায় আনা, রাজশাহীর টেক্সটাইল মিলসের বৃক্ষ ও পুকুর হত্যা করে এবং হাতিরঝিল ভরাট ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা, পরিবেশ বিনষ্টকারী অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার জনগণকে দেয়া, রাজশাহীতে পরিবেশ আদালত স্থাপন করাসহ নানাবিধ দাবী জানানো হয়েছে।
বক্তারা বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী প্রকল্প দ্রতই বাতিল করবে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলে এবং পরিবেশ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে বাংলাদেশের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। একইসাথে আমাদের প্রত্যাশা, রাষ্ট্রের যে সংস্কারের অঙ্গীকার এই সরকারের ভিত্তি, তার বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কাজকে এই সরকার প্রশ্রয় দেবে না।