বুধবার | ২৮শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ খবর :
১০০ বছর চার্জ ছাড়াই চলবে! চীন আবিষ্কার করলো নিউক্লিয়ার ব্যাটারি! আসিয়ান-জিসিসি-চীন সম্মেলন: গ্লোবাল সাউথের নতুন শক্তির জোট বাড়ির ব্যালকনিতেই ফলবে টমেটো, বেগুন, লঙ্কা! ‘কিচেন গার্ডেনিং’ করার সময় মাথায় রাখবেন কোন কোন বিষয়? শাকিবের তাণ্ডবে আফরান নিশো নয়, থাকছেন সিয়াম টাকে চুল গজাবে? টানটান হবে মুখ! রূপটানের দুনিয়ায় নতুন রাজা ‘পিআরপি’ তে কত খরচ? কীভাবে হয়? কী বলছেন চর্ম-চিকিৎসক? মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা সকালে না রাতে? খাবার খাওয়ার আগে না পরে? কখন মাপবেন রক্তচাপ? গরমে জল ঠান্ডা রাখতে মাটির কলসি, জগ ব্যবহার করছেন? সেগুলি ৫ কৌশলে পরিষ্কার করলেই থাকবেন রোগমুক্ত সুদানে কলেরার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে ১৭২ জনের প্রাণহানি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ শুরু কাল, দেখবেন যেখানে
১০০ বছর চার্জ ছাড়াই চলবে! চীন আবিষ্কার করলো নিউক্লিয়ার ব্যাটারি!

১০০ বছর চার্জ ছাড়াই চলবে! চীন আবিষ্কার করলো নিউক্লিয়ার ব্যাটারি!

প্রবাহ ডেস্ক: ভাবুন তো, আপনি এমন একটি স্মার্টফোন / স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করছেন যা একবার কিনেই সারা জীবনের মতো চার্জমুক্ত! এটা কি শুধুই কল্পনা? না প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এমন কল্পনা এখন বাস্তবের খুব কাছাকাছি। সম্প্রতি চীনের একটি স্টার্টআপ কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছে, তারা এমন এক নিউক্লিয়ার ব্যাটারির প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে যা ৫০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত চলতে পারে — একটানা, কোনও চার্জ ছাড়াই!

এই ব্যাটারির নাম Betavoltaic Nuclear Battery। এরকম একটি ব্যাটারির উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তির জগতে নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করতে পারে।

এই ব্যাটারি কি সত্যিই বিদ্যমান?
চীনের Beijing Betavolt Technology নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের শেষদিকে জানায়, তারা বিশ্বের প্রথম কমার্শিয়াল স্কেল নিউক্লিয়ার ব্যাটারির প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে যা আকারে একটি কয়েনের মতো ছোট এবং ৫০ বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম। ভবিষ্যতের লক্ষ্য ব্যাটারির আয়ু ১০০ বছরে পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে এটি একটি পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি। বাজারে এখনো আসেনি, তবে গবেষণায় ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে।

কিভাবে কাজ করে এই ব্যাটারি?
এই ব্যাটারির শক্তির উৎস হলো Betavoltaic Effect। এটি এক ধরনের পারমাণবিক প্রযুক্তি, তবে চুল্লির মতো ভয়ানক নয়। ব্যাটারিতে থাকা রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপ যেমন Nickel-63 থেকে বিটা কণা (ইলেকট্রন) নির্গত হয়। এই কণাগুলো ডায়মন্ড সেমিকন্ডাক্টর-এর মাধ্যমে ইলেকট্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি একটি ছোট ঘরে বন্দি বাইরের পরিবেশে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় না। অবশেষে, এই আইসোটোপের মেয়াদ শেষ হলে এটি নির্বিষ উপাদানে রূপ নেয়। ফলে পরিবেশেও এর প্রভাব নেই বললেই চলে।

কোথায় ব্যবহার হবে এই ব্যাটারি?
এই ব্যাটারি মূলত এমন সব জায়গায় ব্যবহারের জন্য তৈরি,
যেখানে চার্জ দেওয়া অসম্ভব বা খুব ঝুঁকিপূর্ণ: স্পেস স্যাটেলাইট: একবার মহাকাশে পাঠালে সেখানে চার্জ দেয়া বা ব্যাটারি বদলানো সম্ভব নয়।
পেসমেকার: শরীরের ভেতরে বসানো ডিভাইসে দীর্ঘমেয়াদে চার্জমুক্ত ব্যাটারি জীবন রক্ষা করতে পারে।
গভীর সমুদ্রের সেন্সর: যেখানে মানুষের পক্ষে পৌঁছানো কঠিন।
সেনাবাহিনীর গুপ্তচর যন্ত্র: দীর্ঘসময় ধরে নজরদারি চালাতে পারবে নিরবিচারে।

পারমাণবিক শব্দেই কি ভয় পাওয়া উচিত?
এখানেই আসে সচেতনতার জায়গা। সাধারণ মানুষ “পারমাণবিক” শব্দ শুনলেই ভয় পান। কিন্তু এই ব্যাটারি একেবারে আলাদা ও নিরাপদ: বিটাভোল্টাইক ব্যাটারির তেজস্ক্রিয়তা এতই কম যে, এটি চামড়ার বাইরের স্তর পর্যন্তও পৌঁছায় না। সম্পূর্ণ সিল করা ডিজাইন হওয়ায় বিকিরণ বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। এটি বিস্ফোরক বা ক্ষতিকর নয় এমনকি চুরি হলেও এর থেকে অস্ত্র বানানো সম্ভব নয়।বিজ্ঞানীরা একে “নিরাপদ পারমাণবিক শক্তির ভবিষ্যৎ” হিসেবে বিবেচনা করছেন।

৫. তাহলে কি মোবাইল ফোনেও চলবে এই ব্যাটারি? এটাই সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন — আমরা কি ভবিষ্যতে এমন ফোন পাব যা একবার চার্জ দিয়ে সারাজীবন চলবে?
উত্তর: এখন না, কিন্তু ভবিষ্যতে সম্ভাবনা রয়েছে। কেন এখন সম্ভব না? বর্তমান ব্যাটারিটি মাত্র ১০০ মাইক্রোওয়াট (μW) শক্তি দেয়। অথচ একটি স্মার্টফোন গড়ে ২ থেকে ৫ ওয়াট ব্যবহার করে। এই ব্যবধান হাজার গুণের বেশি। এছাড়া মোবাইল ফোনের মতো পোর্টেবল ডিভাইসে পারমাণবিক পদার্থ ব্যবহার করতে গেলে নিরাপত্তা ও আইনগত বাধা রয়েছে।

কোম্পানিটি বলছে, ভবিষ্যতে তারা ১ ওয়াট বা তার বেশি শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে। একাধিক ব্যাটারি একত্র করে শক্তি বাড়ানো সম্ভব। যদি প্রযুক্তি সস্তা ও নিরাপদ হয়, তবে ফোন, স্মার্টওয়াচ এমনকি ল্যাপটপেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কবে নাগাদ? বিশেষজ্ঞদের মতে, এরকম ব্যবহারিক বাস্তবতা আসতে পারে ২০–৩০ বছরের মধ্যে।

বাংলাদেশ কি এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে পারবে? একটি দেশের প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য তিনটি জিনিস দরকার গবেষণা, অর্থায়ন, এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে (যেমন: রূপপুর প্রকল্প) দক্ষতা দেখিয়েছেন। আমাদের রেডিও কেমিস্ট্রি, ন্যানো টেকনোলজি, এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ একসাথে কাজ করলে ভবিষ্যতে এমন প্রযুক্তি তৈরি অসম্ভব নয়। তবে এজন্য প্রয়োজন গভীর গবেষণা, সরকারি-বেসরকারি সহায়তা, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

ভবিষ্যতের কল্পনা: শক্তি যেখানে সময়কে ছাড়িয়ে যাবে। ভাবুন তো, একবার একটি যন্ত্র কিনে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেটি একই ব্যাটারিতে চলছে কোনও চার্জ নেই, তার নেই, রক্ষণাবেক্ষণ নেই। এটাই হতে পারে ভবিষ্যতের ডিজিটাল স্থায়িত্বের রূপরেখা। শুধু প্রযুক্তি নয়, এই ব্যাটারি আমাদের জীবনধারায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে একটি নীরব, নিরবচ্ছিন্ন, নিরাপদ শক্তির যুগ।

শেষ কথা, চীনের উদ্ভাবিত এই নিউক্লিয়ার ব্যাটারি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। তবে এটি ভবিষ্যতের দরজা খুলে দিয়েছে এক দীর্ঘস্থায়ী, রক্ষণাবেক্ষণহীন শক্তির জগতে। আমাদের কাছে এখন প্রশ্ন, আমরা কি সেই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত?

আপনার মতামত কী? আপনি কি এই প্রযুক্তি নিজের জীবনে ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন? পারমাণবিক বলেই কি আপনি ভয় পাবেন, নাকি বিজ্ঞানকে এগিয়ে যেতে দেবেন?


ads



©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.