প্রবাহ ডেস্ক: নভর কাজের শেষে বিছানায় আরাম করে একটু মোবাইল ঘাঁটা বা ল্যাপটপে পছন্দের সিরিজ দেখা -এই দৃশ্য আজকের দিনে অতি পরিচিত। কিন্তু অজান্তেই এই অভ্যাস কেড়ে নিচ্ছে রাতের স্বস্তির ঘুম, ডেকে আনছে অনিদ্রার মতো মারাত্মক সমস্যা। প্রযুক্তি যখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তখন তার অপব্যবহার কীভাবে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, তা নিয়েও সতর্ক থাকা জরুরি। আলো ঝলমলে পর্দার প্রতি এই অমোঘ আকর্ষণ কমবয়সী থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, সকলকেই ঠেলে দিচ্ছে এক নিদ্রাহীন ভবিষ্যতের দিকে।
আমাদের ঘুমিয়ে পড়া এবং জেগে ওঠার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন। স্বাভাবিক অবস্থায় সন্ধ্যার পর অন্ধকার নামলে এই হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যা আমাদের ঘুমোতে সাহায্য করে। কিন্তু মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা অন্যান্য ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে নির্গত হয় এক ধরনের কৃত্রিম নীল আলো (ব্লু লাইট)। এই নীল আলো দিনের আলোর মতো, যা আমাদের মস্তিষ্ককে সজাগ থাকার সঙ্কেত দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই ধরনের ডিভাইসের ব্যবহার সরাসরি মেলাটোনিন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। এমনকী মাত্র ৩০ মিনিট মোবাইল ব্যবহার করলেও স্বাভাবিক ঘুমের চক্র ব্যাহত হয়। শরীর ক্লান্ত থাকলেও মস্তিষ্ক সহজে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারে না। ফলস্বরূপ, বিছানায় শুয়েও ঘুম আসতে দেরি হয়, ঘুমের গভীরতা কমে যায় এবং ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও আরও কয়েকটি কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
# মানসিক উত্তেজনা: সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন, চ্যাটিং, ভিডিও গেমস বা উত্তেজক কোনও কনটেন্ট দেখার ফলে মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়তে পারে, যা ঘুম আসার পথে প্রধান অন্তরায়।
# কাজের চিন্তা: অনেকেই বিছানায় শুয়ে অফিসের ইমেল চেক করেন বা পরের দিনের কাজের পরিকল্পনা করতে থাকেন। এই ধরনের অভ্যাস মস্তিষ্ককে বিশ্রামের পরিবর্তে আরও ব্যস্ত করে তোলে, ফলে ঘুম আসতে চায় না।
# সময়ের হুঁশ হারানো: ডিজিটাল ডিভাইসের আকর্ষণ এতটাই বেশি যে, কখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, তা অনেক সময়ই খেয়াল থাকে না। এর ফলে ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যায় এবং ঘুমের মোট সময় কমে আসে।
দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রার সমস্যায় ভুগলে তা শুধুমাত্র রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় না, বরং একাধিক শারীরিক ও মানসিক জটিলতা সৃষ্টি করে। এর মধ্যে রয়েছে দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, মনোযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, অবসাদ এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা অন্য কোনও ডিজিটাল স্ক্রিনের ব্যবহার বন্ধ করুন।