প্রবাহ ডেস্ক: দেশের ছয় জেলার সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১০৫ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এর মধ্যে ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ৩৯ জন, পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে ২১ জন, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ২০ জন, কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন, মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে ৭ জন এবং খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৫ জনকে পুশইন করা হয়।
বুধবার (২১ মে) দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এসব পুশইনের ঘটনা ঘটে। পরে ওই ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে-
ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ৩৯ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের আটক করে বিজিবির হাতে সোপর্দ করেছে। আটককৃতরা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।
বিজিবি জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর ও ফুলগাজীর খেজুরিয়া সীমান্তে ৩৯ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। একই সময় তাদের আটক করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়নের (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ৪ বিজিবির আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় ৬ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ১৩ জন শিশুসহ ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। একই সময় ১০ বিজিবি আওতাধীন সীমান্তে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৩ শিশুসহ ২১ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ।
বুধবার (২২ মে) দিবাগত রাত ৪টার দিকে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫৭-এর ১০ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে তাদের পুশইন করা হয়। এর মধ্যে ৬ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ১৩ জন শিশু রয়েছে। পরে জয়ধরভাঙ্গা বিওপির টহল দল তাদের আটক করে। তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক বলে জানা গেছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, জয়ধর ভাঙ্গা ক্যাম্পের বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ২১ জনকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে বিএসএফ। পরে আমাদের টহল দল সীমান্তে তাদের আনাগোনা দেখে আটক করে। ইতোমধ্যে আমাদের ব্যাটালিয়ন কোম্পানি ও ক্যাম্প কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বিএসএফের কাছে জানতে চেয়েছি তারা কেন অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে তাদেরকে ফেরত পাঠালো। বিজিবিকে জানিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের ফেরত পাঠানো উচিত ছিল। এ বিষয়ে আমরা বিজিবির পক্ষ থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা দায়ের করব। তবে যারা শিশু রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নয়। সীমান্তে বিজিবি সর্বদা সচেতন আছে। যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিজিবির টহল দল ২৪ ঘণ্টা সীমান্তে কড়া টহলদারি করছেন।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ২০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ।
বুধবার (২১ মে) দিবাগত রাতে পাটগ্রাম উপজেলার রহমতপুর গাটিয়ার ভিটা সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করা হয়।
পুলিশ বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মধ্যরাতে বিএসএফ গাটিয়ারভিটা সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক নারী ও শিশুসহ কয়েকজনকে বাংলাদেশে পুশইন করে। ২০ জনকে বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তাদের মধ্যে ১১ জন নারী, সাতজন শিশু ও দুইজন পুরুষ রয়েছে।
বিজিবি ধবলসুতী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুল মতিন বলেন, বিএসএফ ২০ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করলে তাদেরকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিবি সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ৩/৪ দফায় পুশইন করা ২০ জনকে জমা দিয়েছে বিজিবি। আটককৃতরা ২০/২৫ দিন ভারতীয় জেলে বন্দি ছিলেন। এরপর ভারতীয় পুলিশ গাড়িতে করে নিয়ে এসে সীমান্তে ঠেলে পাঠিয়েছে।
কুমিল্লা সীমান্তে নারী-পুরুষ, শিশুসহ ১৩ বাংলাদেশিকে অবৈধভাবে ভারত থেকে পুশইন করেছে বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে বিজিবি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোর ৪টায় সীমান্তের কুমিল্লা সদর উপজেলার গোলাবাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা ১০ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে কুমিল্লা সদর উপজেলার গোলাবাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় বিএসএফ নারী-শিশুসহ ১৩ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে। অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় ৬০ বিজিবি টহলদল তাদের আটক করে। তাদের মধ্যে পুরুষ তিনজন, নারী তিনজন এবং সাতজন শিশু রয়েছে। অধিকাংশের বাড়ি ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায়।
আটককৃতরা বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ সাত বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালের দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, পুশইনের পর তুতবাড়ি-সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা ওই সাতজনকে আটক করেন। আটককৃতদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ২ জন নারী ও ৩ শিশু রয়েছে। তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।
এ বিষয়ে ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, আটক ব্যক্তিরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমরা তাদের কুলাউড়া থানায় হস্তান্তর করেছি।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, বিজিবি আটক ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ৫ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোরে রামগড় উপজেলার ফেনীরকুল চর এলাকার সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করা হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বিজিবি তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন—মো. উম্মেদ আলী (৪২), তার স্ত্রী সেলিনা বেগম (৩৫) এবং তাদের তিন কন্যা রুমি খাতুন (১৫), রুম্পা খাতুন (১২) ও সুমামিয়া খাতুন (৮)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সীমান্ত পার হয়ে সোনাইপুল বাজার এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয়রা বিষয়টি মহামুনি বিজিবি ক্যাম্পে জানায়। পরে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের হেফাজতে নেয়।
আটক উম্মেদ আলী নামে একজন দাবি করেন, গুজরাট থেকে প্রথমে বিমানে এবং পরে বাসে করে তাদের ত্রিপুরা রাজ্যে নেওয়া হয়। সেখান থেকে রাতে চোখ ও হাত বেঁধে তাদের ফেনী নদীর তীরে ফেলে দেওয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে নদী পেরিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ভারতের দিকে ফিরে যেতে চাইলে বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে হত্যার হুমকি দেয় বলেও জানান তিনি।
রামগড় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমত জাহান তুহিন বলেন, বিজিবি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা পাঁচ ভারতীয় নাগরিককে আটক করেছে। বর্তমানে তারা বিজিবির হেফাজতে রয়েছে।