শুক্রবার | ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ খবর :
নিজেদের ছবি উধাও, পোস্টে কাঁটাছেঁড়া! রাজদীপ-তন্বী প্রেমভাঙার নেপথ্যে কি অন্য নারী? ৬ সীমান্ত দিয়ে ১০৫ জনকে বিএসএফের পুশইন সকালে ঘুম থেকে উঠে এই ৫ ভুল করলেই বারোটা বাজবে লিভারের! অজান্তেই তিলে তিলে শেষ হবে শরীর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল আরএমপি ডিবির অভিযানে ১০টি চোরাই মোবাইলসহ গ্রপ্তার ১ সরকারি হাসপাতাল পরিচ্ছন্নের কাজ বেসরকারি খাতে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে কি না, পুনর্বিবেচনা করবে বিএনপি দ্বিতীয় দিন শেষে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল ২৫৩ রানে পিছিয়ে ডেঙ্গুতে একদিনে ৪৬ জন হাসপাতালে ভর্তি, করোনায় সংক্রমিত ৬ ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে, ইশরাক আন্দোলন স্থগিত করলেন
জোহা হলে মীর রহমত আলীর চোখ উপড়িয়ে নিলো রাজাকার, পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরতার স্বাক্ষী আব্দুল মান্নান সরকার

জোহা হলে মীর রহমত আলীর চোখ উপড়িয়ে নিলো রাজাকার, পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরতার স্বাক্ষী আব্দুল মান্নান সরকার

ওয়ালিউর রহমান বাবু: রাজশাহীতে অসহযোগ আন্দোলন প্রতিরোধ সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি (ন্যাপ) রাজশাহীর সাবেক নেতা বালিয়পুকুর পাড়ার নুরুল হুদা সরকারের ভাই আব্দুল মান্নান সরকার ভূমিকা রাখেন। রাজশাহীর চারঘটা থানার মীরগঞ্জ ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) প্লাটুনের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী বাঙালি নায়েক সুবেদার সিরাজউদ্দিন লস্কর সরদহ আইয়ুব ক্যাডেট কলেজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক এ বি সিদ্দিকী রাজশাহী শহরের এ্যাডভান্স করে নিয়ে নিলেন এর নিয়ন্ত্রন।

ইহা পাকিস্তান রাইফেলস নওগাঁ ৭ নং উইং এর স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী বাঙালি ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী রাজশাহী শহরে এলে তাকে প্রতিরোধ যুদ্ধেও নেতৃত্ব দেওয়া হলো। নায়েক সুবেদার সিরাজ উদ্দিন লস্কর বালিয়াপুকুর ও আসে পাশে তার বাহিনী নিয়ে পজিশন নিলেন। নায়েক সুবেদার সিরাজ উদ্দিন লস্কর আব্দুল মান্নান সরকারদের বাড়িতে কন্ট্রোল রুম করলে, আব্দুল মান্নান সরকার সঙ্গী মীর ইকবাল ও অন্যান্যদের নিয়ে শীতল মিলে থাকা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে যাবার সময় গাড়ী উল্টে আহত হলে তাকে ভদ্রার হযরত ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা দেওয়া হলো।

অবরুদ্ধ হয়ে পড়লো রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা। শিরোইল কলোনীতে থাকা অবাঙালীদের নিরস্ত্র করা হলো। রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টের পতনের মুহুতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমনে প্রতিরোধ ভেঙ্গে গেলে আব্দুল মান্নান সরকার রাজশাহী জেলা সদর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে তরুন যুবকদেও সংগঠিত করে তাদের সীমান্ত পার হতে সহযোগীতা করতে থাকলেন। ১১ অক্টোবর তিনি বালিয়াপুকুরের তাদের বাড়িতে এলে এ খবর পেয়ে পাকিস্তানি সৈন্যারা ১৬ অক্টোবর তাদের বাড়ি ঘিরে ফেললো। ভাই নুরুল হুদা সরকার ও ভাবীকে গাছের সাথে বেঁধে ভাইয়ের ছেলে আসলাম সরকার, মেয়ে বেবীর দিকে রাইফেল তাক করে আব্দুল মান্না সরকারকে ধরে ফেললো।

প্রতিরোধ যোদ্ধা মীর ইলকবালের বাবা মীর রহমত আলী কে বাড়িতে থাকতে দেওয়ায় শ্বশুর খবির উদ্দিনকে ধরে আনলো। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে ও পরিবারটিকে মারধর করলো। অবাঙালি এক সিএফ বেয়েনেট দিয়ে আব্দুল মান্নান সরকরের গেঞ্জি ছিড়ে ফেললো। বেঁধে ফেললো মীর রহমত আলীর চোখ। ধরে আনলো নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিদের। মীর রহমত আলী ও আব্দুল মান্নান সরকারকে রাইফেলের বাট দিয়ে মারতে মারতে হাঁটিয়ে বালিয়া পুকুর থেকে শিরোইল হাই স্কুলের কাছে এনে গাড়িতে তুললো। আব্দুল মান্নান সরকারকে গাড়ির মধ্যে চিত করে ফেলে বুকের উপর বুটজুতা পরা পা চাপিয়ে দিলো। মীর রহমত আলীর মাথার উপর বুটজুতা পরা পা রাখলো।

ঘোড়ামারা পড়ায় তাদের আনার পর এক অবাঙালি শাড়ী নিয়ে এসে আব্দুল মান্নান সরকারের চোখ বেঁধে ফেললো। বেশ কিছুক্ষন পর আব্দুল মান্নান সরকারকে চুল ধরে টেনে তুলা হলো। তিনি অনুভব করলেন তার পিছনে আছেন মীর রহমান আলী। একটা শিড়ির কাছে এনে তার চোখ খুলে মীর রহমত আলীকে দেখিয়ে আব্দুল মান্নান সরকারকে বললো ঠিক সে পকড়ো। আব্দুল মান্নান সরকার দেখলেন তাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জোহা হলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি মীর রহমত আলীকে ভাল করে ধরে রাখলেন। চোখে অনুভব করলেন অন্ধকার। একজন পিছন থেকে ঘূষি মারতেই তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন। তার চুল ধরে টেনে উপরে উঠানো হলো। দেখলেন ঘরের মধ্যে অনেক বন্দী কে। এক অবাঙলি মিলিসিয়া ধাক্বা মেরে তাদের দুই জনকে ঘরের মেঝেতে ফেলে দিলো। মীর রহমত আলীর চোখ খুলে দিতেই উনি আল্লাহকে ডাকলেন। তাদের ঘরের মধ্যে রেখে দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া হলো।

বয়স্ক এক বন্দী আব্দুল মান্নান সরাকারকে জানালেন তার বাড়ি পাবনায়। সীমান্ত পার হয়েছিলেন দেশের টানে ফিরে এলে শান্তি কমিটির মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেও রক্ষা পেলেন না। পাকিস্তানি সৈন্যরা ধরে নিয়ে গেছে তার মেয়েকে। জমি জমা সংক্রান্ত ঘটনায় তাকে ওরা ধরে এনেছে। পিপাসাই কাতরাতে থাকলেন মীর রহমত আলী। বন্দীটি বলেন পানি দিলে পাকিস্তানি সৈন্যরা গালাগালি করে নির্যাতন করবে, কষ্ট সহ্য করতে হবে। পিঠের ব্যাথার মীর রহমত আলী অস্থির হয়ে উঠলেন। আব্দুল মান্নান সরকার তার জামা তুলে দেখলেন পিঠ থেকে মাথা পর্যন্ত আঘাতের চিহ্ন।

তার পিঠ টিপে দিতে থাকলেন। এক পাকিস্তানি সৈন্য বললো মেজর সাহাব আতা হায়। মীর রহমত আলী দাঁড়াতে পারলেন না। তার কোমর, ডান পা ভেঙ্গে গেছে উনি দেওয়ালে হেলান দিলেন। মেজর কানে বালি পরা একজন ও এক বাঙালী রাজাকারকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।

মেজরের নাম ইলিয়াস,কানে বালিপরা লোকটির নাম আসলাম খান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের আসলাম খান মীর রহমত আলীকে জেরা করতে থাকলো, মীর ইকবাল কোথায়? উনি উত্তর দিলেন তিনি জানেন না। ফলের ব্যবসা করেন, সরকারের ডাকে শহরে এসে শ্বশুর খবির উদ্দিনের বাড়িতে উঠেছিলেন। তার উপরে শুরু হলো নির্যাতন, বেতের আঘাতে তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়েলেন। এর পর শুরু হলো আব্দুল মান্নান সরকারকে জেরা। তিনি বললেন তিনি কিছুই জানেননা, ইটের ভাটার ব্যবসা করেন। তাকে ধাক্কা মেরে ঘরের মেঝেতে বসিয়ে দেওয়া হলো।

এক বাঙালী রাজাকার জেরার উত্তর লিখে নিলো। আব্দুল মান্নান সরকার দেখলেন, পাকিন্তানি সৈন্যরা বয়স্ক বন্দীটিকে ধরে নিয়ে গেলো। মীর রহমত আলী আব্দুল মান্নান সরকারকে অনেক কথা বললেন। তারা দেখলেন ঘরের বাইরে কড়া পাহারা দিচ্ছে পাকিন্তানি সৈন্যরা। এক সৈন্য বাইরে থেকে একটি থালা ঘরের মধ্যে ফেলে দিয়ে উর্দুতে দাঁড়াতে বললো। নানা চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলেন আব্দুল মান্নান সরকার। পাকিন্তানি সৈন্যদের কিছু বুঝতে না দিয়ে ভাবতে থাকলেন কি করা যায়।

এক হাতে থালা অন্য হাত দিয়ে মীর রহমত আলীকে কোনো রকমে ধরে বাথরুমে নিয়ে যাবার সময় পাশের ঘরে দেখতে পেলেন ন্যাশলান আওয়ামী পাটি (ন্যাপ) নেতা ভাষা সৈনিক আতাউর রহমান ও বাবর আলীকে। বাবর আলী তাকে দেখতে পেয়ে চোখ বড় করে উঠে দাঁড়ালেন। আব্দুল মান্নান সরকার পেট ভরে বাতরুমের কলের পানি খেয়ে দেখতে পেলেন জুম্মন মিয়া ছিচুড় দিয়ে বাথরুমে যাচ্ছে তার পা ফুলে গেছে। পায়ের পাতা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। মীর রহমত আলী আব্দুল মান্নান সরকারকে বললেন “আলাহ তোমাকে রহম করবেন” এক পাকিন্তানী সৈন্য বাথরুমে ব্যবহার করা পানি ভর্তি থালাতে লবণ বিহীন খিচুড়ী ঢেলে দিলো। বাধ্য হয়ে এ গুলি খেয়ে আব্দুল মান্নান সরকার ও অসুস্থ মীর রহমত আলী ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়লেন। অন্ধকার হয়ে এলো। ছাদের উপর কিসের যেন শব্দ হতেই। পাকিন্তানি সৈন্যরা দৌড়া দৌড়ি করতে থাকলো।

দুই জন পাকিন্তানি সৈন্য টর্চের আলো জ্বালিয়ে তাদের অন্য একটি ঘরে ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দিলো। আলো জ্বললো। আব্দুল মান্নান সরকার দেখলেন একটি টেবিল, একটা চেয়ার, খালি বস্তা, মাথার চুল, জমাট রক্ত। গোলাগুলির শব্দ পেলেন। মেজর ইলিয়াস কানে বালি পড়া আসলাম খান ও দুই অবাঙালি রাজাকার নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আসলাম খান ঘরে ঢুকেই মীর রহমত আলীকে বললো কেমন আছো? তোমাকে আজাদ করদেগা। রহমত আলী বললেন তিনি কিছুই জানেন না। আসলাম খান রহমত আলীর মাথাই হাত দিয়ে বললো তোম হামারা বহুত জোয়ান, বিহারী আদমিকো মারডালা।

ঘুসি মেরে চেয়ারে বসিয়ে বেত দিয়ে তার চুল দাড়ি উপড়ে নিতে থাকলো। পা ধরে টেনে তাকে ঘরের মেঝেতে ফেলে দিয়ে বুকের উপর চাপিয়ে দিলো বুট জুতা পরা পা। অবাঙালি রাজাকার মীর রহমত আলী চোখ উপড়ে নিলো। যন্ত্রনায় চিৎকার দিতে থাকলেন তিনি। রক্তে লাল হয়ে গেলো তার মুখ , শরীর। আস্তে আস্তে থেমে গেলো তার চিৎকার। এরপর আসলাম খান আব্দুল মান্নান সরকারের কাছে জানতে চাইলো তথ্য। উনি উত্তর দিলেন কিছুই জানেন না। আসলাম খান প্লাশ দিয়ে আব্দুল মান্নান সরকারের হাতের, পায়ের নোখ তুলে নিলো। তার প্রসাবের অঙ্গ দিয়ে বেড়াতে থাকলো রক্ত। অজ্ঞান হয়ে গেলেন জ্ঞান ফিরে দেখলেন রাজশাহী জেলা সদরের দরগা পড়ার শালু বার্বচি কে।

উনি কেঁদে বললেন তাকে ধরে এনেছে সুবেদার নাসিম। তার ছেলে শাহ আলম কে বলতে হবে বিছানায় তিন হাজার টাকা রাখা আছে। আব্দুল মান্নান সরকার গোঙ্গানীর শব্দে তাকিয়ে দেখলেন কাজলা পাড়ার কান্দু ছেচুর দিয়ে বাতরুমে যাচ্ছেন ফুলে গেছে পা, পায়ের পাতা দিয়ে রক্ত ঝরছে। পাকিস্তানি সৈন্যদের দেওয়া অখাদ্য খিচুড়ী খেয়ে কৌশলে বাথরুমে যেতে গিয়ে দেখলেন পাশের ঘরে বন্দী থাকা ন্যাশলান আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নেতা আতাউর রহমান, বারব মিয়া নেই, আংতকে উঠলেন। বিকেলে তাদের সকলকে ঘর থেকে বের করে নিচে নামিয়ে মেজর ইলিয়াসের অফিসের সামনে আনা হলো।

দেখতে পেলেন আতাউর রহমান, বাবর মিয়া, জুম্মন মিয়া, সমসের আলি সহ অনেককে। মীর রহমত আলি ও বয়স্ক বন্দীটিকে দেখতে না পেয়ে বুঝে ফেললেন তাদের হত্যা করা হয়েছে। মেজর ইলিয়াস সকল বন্দীকে পর্যবেক্ষন করার সময়। গোলাগুলির শব্দ হতেই তাদের সকলকে তাড়াহুড়া করে উপরে তোলা হলো। দৌড়া দৌড়ি করতে থাকলো পাকিস্তানি সৈন্যরা। আব্দুল মান্নান সরকার ন্যাপ নেতা আতাউর রহমানকে পরিচয় দিলেন।

বাবর মিয়া ঔষুধ খেতে খেতে বললেন আর ঔষুধ খেয়ে কি হবে। এক বন্দী কাঁদতে থাকলে আতাউর রহমান তাকে সাহস দিয়ে বললেন এটা যুদ্ধ ক্ষেত্র বাঁচতে হবে। পাকিন্তানি সৈন্যরা ধরে আনা তিন নতুন বন্দীকে ধাক্কা মেরে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। আতাউর রহমান সকলকে বললেন নিজে মরবে কিন্তু অন্যদের নাম বলবেনা। তিনি সকলকে নামাজের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। দেয়ালে তায়াম্মুম করে আতাউর রহমান নামাজের ইমামতী করলেন। এর পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের সকলকে নিচে নামালো।

পাকিস্তানি সৈন্যারা আতাউর রহমান, বাবর আলী, সালু বাবুর্চীকে দিয়ে বাঁশ, কাঠ সরালো। আব্দুল মান্নান সরকারকে দিয়ে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করালো। মামা ডাক শুনে তাকিয়ে দেখলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ী চালক সমসের আলী কে। কিছুক্ষন পর সকলকে ঘরে যেতে বলা হলে আতাউর রহমান সকলকে নামাজের প্রস্তুতি নিতে বললেন কোন তথ্য না পেলে পাকিস্তানি সৈন্যরা কিছুই করতে পারবেনা। জ্বরে বাবর মিয়ার অবস্থা খারাপ হতে থাকলো।

হঠাৎ একজন ঘরে ঢুকে বাবর মিয়াকে ঔষুধ দিয়ে বললেন তার নাম মানু বাড়ি কাজলায়। কান্দু মিয়াকে ঔষুধ দেবার জন্য কৌশলে মিস্ত্রীর কাজ নিয়েছেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের দেওয়া অখাদ্য খিচুড়ী খেয়ে আতাউর রহমানের ইমামতিতে আব্দুল মান্নান সরকাররা মাগরিবের নামাজ পড়লেন। সারা রাত আতঙ্কে কাটালেন। সকালে দুই জন পাকিস্তানি সৈন্য এসে বললো মান্নান সরকার কিসকা নাম? আব্দুল মান্নান সরকার বললেন তার নাম মান্নান সরকার। তাকে অন্য একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে করতে থাকলো জেরা। চেয়ারম্যানের নাম কি জানতে চেয়ে বুকের উপর বুট জুতো পরা পা চাপিয়ে দিলো।

আর একজন তার পায়ের তালুতে বেত দিয়ে মারতে থাকলে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। জ্ঞান ফিরে দেখলেন তিনি পড়ে আছেন ইট ভাটার চিমনিতে (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ব পাড়ার পাশে জেবের মিয়ার ইট ভাটায়) উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলেন, পেলেন দুর্গন্ধ, দেখলেন উলঙ্গ লাশ। কমর, তলপেটে ব্যাথা অনুভব করলেন। ছেচুড় দিয়ে একঘন্টা পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাড়ার কাছে দেখা পেলেন একজন কে। তিনি তাকে একটি বাড়ির সিঁড়িতে বসিয়ে গরম হরলিকস খাইয়ে জামা পরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিনোদপুর প্রাইমারী স্কুলের পাশের একটি বারান্দায় বসিয়ে নাম ঠিকানা লিখে নিয়ে গেলেন।

হঠাৎ করেই অলৌকিক ভাবে দেখা পেয়ে গেলেন আত্মীয় মোজামের । তিনি তাকে ঝুঁকি নিয়ে বালিয়াপুকুরের বাড়িতে পৌছিয়ে দিলে। ডাক্তার হযরত ও রুহুল আমিন তার চিকিৎসা করলেন। পরের দিন আব্দুল মান্নান সরকার হরিয়ানে শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে লেবার সর্দার চর কাজলার তাজেরের সহযোগিতায় বালি বহন করা নৌকার পাটাতনের নিচে অবস্থান নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর হসপাতালে চিকিৎসা নেরবার সময় সেবিকা পেলেন রাজশাহীর এক মেয়েকে।

বিজয়ের পর রাজশাহীতে ফিরে এলেন। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্যাতন, তিনি এর জলন্ত স্বাক্ষী। তার কথা সেদিন যারা পাকিস্তানি সৈন্যদের দোসর ছিলো তারা এখন মুখোশ পাল্টিয়েছে, সেজেছে ভাল মানুষ, কৌশলে ঢুকে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোতে এদের চিহ্নিত করা উচিত।

লেখক: ওয়ালিউর রহমান বাবু, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ও সাংস্কৃতিক কর্মী।


ads



©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.