নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীতে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার ও বিভিন্ন থানার অভিযুক্ত মামলার আসামী, আওয়ামী লীগের দোসর, অপরাধী ও দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবীতে আরএমপি পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে রাজশাহীর বিএনপি সহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। শনিবার দুপুর ১টায় পুলিশ আরএমপি সদরদপ্তরে পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি রাজশাহী মহানগরের অন্তর্গত বোয়ালিয়া থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু, রাজপাড়া থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি শওকত আলী, শাহ্ মখ্দুম থানা বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ মতিহার থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আসনার আলী, বোয়ালিয়া থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু, রাজপাড়া থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, মখ্দুম থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, মতিহার থানা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খাজদার আলী ও রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট।
রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র ১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি শহীদ আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা, ৩০নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি শুকুর আলী, যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুর হক হারু, রাজপাড়া থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি শাহানুর ইসলাম মিঠু, মহানগর যুবদলের বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজির হাসান, আতাউর রহমান বাধন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বাশিরুল ও মেহেদী হাসান সোহাগ, রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রেজা রিপন, মহানগর কৃষক দলের সাবেক সদস্য সচিব গোলাম সাকলায়েন ইকো। এাছাড়া বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারসহ জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বিএনপি নেতা কর্মীরা রক্ত বিসর্জন দিয়ে চরম নিপীড়নের মুখে রাজপথে থেকেছে। দেশের প্রায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র জনতার সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হয়েছে। অভূতপূর্ব এই বিজয় সার্বজনীন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী এই গণঅভ্যুত্থানে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
তারা উল্লেখ করেন সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন পূর্ব সংস্কারের জন্য সকল রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়োজিত করেছে। কিন্তু হতাশাজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিগত কয়েক মাসে রাজশাহী নগরীতে আইন-শৃঙ্খলার ব্যবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। নগরীতে যৌনহয়রানী বেড়েছে, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বেড়েছে চাঁদাবাজি, বিগত দিনের জুলাই-আগস্টেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক ফ্যাসিবাদের দোসররা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নগরীতে কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম ও অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারও লক্ষণীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
রাজশাহী মহানগরীর সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কিছু দাবী তুলে ধরেন। দাবীগুলো হলো পুলিশ বাহিনীকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে; সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্তভাবে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করা অতি আবশ্যক, সকল মামলার আসামি, অভিযুক্ত অপরাধী, জুলাই আন্দোলনে মামলায় অভিযুক্ত, ছাত্র জনতার উপর হামলায় জড়িত ব্যক্তি, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী, নিষিদ্ধ সংগঠনের সক্রিয় নেতাকর্মী, দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত আওয়ামী লীগের দোসর সহ বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে ও চাঁদাবাজি রোধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে চিহ্নিত চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করতে হবে। কোন ব্যক্তি বা দলীয় ব্যানার ব্যবহার করে কেউ যেন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীকে জিম্মি না করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে যুবসমাজকে রক্ষার্থে রাজশাহীর চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও মাদকের আড্ডায় নিয়মিত অভিযান আরও বাড়াতে হবে।
তারা আরো দাবী জানান নগরীতে অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ অভিযুক্তরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে না। পুরাতন মার্ডার মামলার অনেক এজাহারভুক্ত আসামীও প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে এবং পুনরায় বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করতে সক্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর ভূগরইল এলাকায় যুবদল নেতার বাবাকে এবং কাদিরগঞ্জে নিরীহ রিক্সা চালক পথচারীকে হত্যা গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে। এ নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে ও আসামী গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়ার উপক্রম হচ্ছে। সকল ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
তারা দাবী করেন নগরীতে কিশোর গ্যাং, ইভ টিজার এবং ছিনতাইকারীদের নতুন তালিকা তৈরি করে অভিযান পরিচালনা অতীব জরুরী। নগরীতে রাত্রিকালীন টহল আরও বৃদ্ধি করতে হবে। রাজশাহী মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবলুর বাসায় অগ্নিসংযোগ, গুলি, লুটতরাজসহ পরিবারের নারী ও শিশুদের টার্গেট করে হামলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের সত্ত্বেও কোন আসামি গ্রেফতারের উদ্যোগ ও অভিযান দৃশ্যমান হয়নি। বরং ঘটনায় অভিযুক্ত অস্ত্রধারীরা বিভিন্নভাবে যুবদল নেতা রুহুল আমিন বাবলুকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে, প্রকাশ্যে নিজ এলাকায় চলাফেরা করছে। যুবদল নেতা রুহুল আমিন বাবলু সহ তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা প্রদানে এবং তার দায়েরকৃত মামলার সকল আসামিদের গ্রেপ্তারে আপনার আশু পদক্ষেপ কামনা করছি। মনে রাখা প্রয়োজন, অপরাধীদের কোন দল নেই।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয় দেশবিরোধী সকল চক্রান্ত রোধে সকল নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর নজরদারি আরো বাড়াতে হবে ও ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে ও রাজশাহীতে কমিউনিটি পুলিশিং সকল কমিটি দ্রুত পুনঃগঠন ও সংস্কার করে কমিউনিটি পুলিশিং এর কার্যক্রম বাড়াতে হবে বলে তারা দাবী জানান।