প্রবাহ ডেস্ক: জাপানের অধিবাসীদের কথা উঠলেই মাথায় আসে তাঁদের নিয়মানুবর্তিতার কথা। জাপানিদের দীর্ঘায়ুর নেপথ্যে রয়েছে পরিমিত আহার এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনশৈলী। কিন্তু জানেন কি জাপানিদের এমন কিছু অভ্যাস রয়েছে যা পেশাদার জীবনেও এনে দিতে পারে সাফল্য? এই ত্রিমুখী পদ্ধতিতে মনে রাখতে হবে তিনটি শব্দ, মুডা-মুরি-মুরা।
১. মুডা (অপচয়)
* সময়ের অপচয়: আমরা প্রায়শই অপ্রয়োজনীয় কাজে, যেমন – অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখা বা অপ্রয়োজনীয় মিটিং-এ সময় নষ্ট করি। মুডা বা সময়ের অপচয় চিহ্নিত করে তার পরিমাণ কমিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা শখের জন্য অনেক সময় বের করা যায়।
* জিনিসপত্রের অপচয়: ঘরে অপ্রয়োজনীয় জিনিস জমিয়ে রাখা, খাবার নষ্ট করা, বা এমন জিনিস কেনা যা খুব কম ব্যবহার করা হয় – এগুলো সবই মুডা। ডি-ক্লাটারিং (অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দেওয়া) বা মিনিমালিজম (স্বল্প জিনিসে জীবনধারণ) এর নীতি গ্রহণ করে এই অপচয় কমানো যায়।
* অর্থের অপচয়: অপ্রয়োজনীয় সাবস্ক্রিপশন, ঘন ঘন বাইরে খাওয়া, বা হঠকারী কেনাকাটা অর্থের অপচয় ঘটায়। একটি বাজেট তৈরি করে এবং খরচের হিসাব রেখে এই ধরনের মুডা কমানো যায়, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে।
* শক্তির অপচয়: নেতিবাচক চিন্তা, অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ বা অন্যের সঙ্গে অহেতুক তর্কে জড়িয়ে পড়া মানসিক শক্তির অপচয়। ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয় এড়িয়ে চললে এই শক্তি সঞ্চয় করা যায়।
২. মুরি (অতিরিক্ত বোঝা)
* কাজের অতিরিক্ত বোঝা: নিজের ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত কাজ বা দায়িত্ব নেওয়া একধরনের বোঝা বা মুরি। এর ফলে মানসিক চাপ, ক্লান্তি এবং বার্নআউট হতে পারে। নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী না বলতে শেখা জরুরি। কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নেওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া মুরি কমাতে সাহায্য করে।
* শারীরিক অতিরিক্ত বোঝা: অতিরিক্ত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শরীরের ওপর মুরি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।
* মানসিক অতিরিক্ত বোঝা: একসঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করা, সব কিছু নিখুঁত করার চেষ্টা করা, বা অতীতের ভুল নিয়ে অনুশোচনা করা মানসিক চাপ বাড়ায়। মাইন্ডফুলনেস (সচেতনতা) অনুশীলন, মেডিটেশন এবং প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া মানসিক মুরি কমাতে পারে।
৩. মুরা (অসামঞ্জস্যতা)
* অনিয়মিত রুটিন: প্রতিদিনের ঘুমের সময়, খাওয়ার সময় বা কাজের সময়ে খুব বেশি অসামঞ্জস্যতা থাকলে তা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একটি নিয়মিত দৈনন্দিন রুটিন তৈরি এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করলে মুরা বা অসামঞ্জস্যতা কমানো যায়। এতে কাজের গতি ও মানসিক স্থিরতা আসে।
* আয় ও ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতা: মাসের শুরুতে প্রচুর খরচ করে মাসের শেষে টানাটানিতে পড়া আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতা বা মুরা নির্দেশ করে। একটি সুচিন্তিত বাজেট এবং সঞ্চয়ের পরিকল্পনা এই অসামঞ্জস্যতা দূর করতে পারে।
* কাজ ও বিশ্রামের অসামঞ্জস্যতা: একটানা অনেক দিন কঠোর পরিশ্রম করা এবং তারপর দীর্ঘ বিরতি নেওয়া, অথবা কোনও দিন খুব বেশি কাজ করা এবং অন্য দিন কিছুই না করা – এই ধরনের মুরা বা অসামঞ্জস্যতা দীর্ঘমেয়াদে জন্য ক্ষতিকর। কাজ এবং বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।