নিজস্ব প্রতিবেদক: শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে আম উৎপাদনের বাংলাদেশ থাকলেও রফতানিতে বরাবরই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এর জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, উন্নত প্রযুক্তিতে এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) মেনে উৎপাদন না করা, প্যাকেজিংয়ে সমস্যা, ব্র্যান্ডিং ইমেজ সট ও বিমানের অতিরিক্ত ভাড়াকেই দায়ি করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এবার বিশ্বের ৩৮টি দেশে পাঁচ হাজার টন আম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৩ হাজার ৬৭৯ টন বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দেশে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫ লাখ টন আম উৎপাদন হতে পারে। এর মধ্যে রফতানিযোগ্য আমের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার টন মাত্র।
রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর দেশে প্রায় ২৪-২৫ লাখ টন আম উৎপাদন হতে পারে। যেখানে রফতানিযোগ্য প্রায় ৪০ হাজার টন। আগে যেখানে দেড় হাজার টন আম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল, সেখানে এবার পাঁচ হাজার টন ধরা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে চীনে আম রফতানি করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে রফতানির বিষয়েও আলোচনা চলছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে আমের সবচেয়ে বেশি ফলন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী,নওগাঁ, সাতক্ষীরা, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রংপুরে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের আমের ফলন হয়েছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার ৪৯৯ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪৫৯ টনে। গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ২৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৩ টন আম উৎপাদন হয়েছে।
আম উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় থাকলেও রফতানিতে বরাবরই পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রফতানি করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৩১ টন বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮৮ টন। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে হয় ১ হাজার ৩২১ টন। তবে এবার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে।
কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের প্রায় ১০টি জেলায় ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, ক্ষীরশাপাতি, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশরিদানা, নীলাম্বরি, কালিভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপুরী, কারাবাউ, কেউই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাঁড়িভাঙ্গা, ছাতাপড়া, গুটলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী এবং রুপালি জাতের আম উৎপাদন হয়, যা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের ৩৮টি দেশে রফতানি করা হয়। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, ইতালি ও সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি আম রফতানি হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, কুয়েত, কাতারসহ ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে আম রফতানি করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আবহাওয়া ও ভৌগোলিক কারণে এ দেশে আমের উৎপাদন বেশি। প্রতি মৌসুমে ২০-২৫ লাখ টন আম উৎপাদন হয়, যা বিশ্বের মধ্যে সপ্তম। আমাদের আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। তবে এবার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টন নির্ধারণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আম পাঠাতে পারলে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে।’
তবে এবার নতুন করে চীনে রফতানির বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশ থেকে আম কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। আর চীনে রফতানির ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো ছিল সেগুলো কেটে গেছে। তাই আশা করছি এবার সর্বোচ্চ পরিমাণে আম রফতানি হবে।
রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন ৪০ হাজার টন হলেও লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ার কারণে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মতো আরো অনেক দেশ আম উৎপাদন ও রফতানি করে। সেসব দেশে তো আমরা রফতানি করতে পারি না। আবার আমাদের রফতানির ক্ষেত্রে আরেকটি বাধা হচ্ছে বিমান ভাড়া বেশি এবং বিমানে জায়গা সংকট। অথচ ভারত-পাকিস্তানে তা অনেক কম। বিমান ভাড়া কমানো হলে এবং বিমানে জায়গা দেয়া হলে আমরা অনেক বেশি আম ও সবজি রফতানি করতে পারব।’