শুক্রবার | ১১ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

রাবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে বুধবার সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানান।

এ দিন ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, আবাসিক হল ও অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে উত্তোলন করা হয়।

সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর ও অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম , প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ মিনার ও বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান।

এরপর সকাল সোয়া ৯টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় স্মৃতিচারণ ও সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠান। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন কমিটির সভাপতি উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ূমের স্ত্রী অধ্যাপক মাসতুরা খানম স্মৃতিচারণ করেন।

রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালামের সঞ্চালনায় অধ্যাপক মাসতুরা খানম বলেন,“১৯৪৭ সালে ইংরেজদের দুইশ বছরের শাসন-শোষণের বেড়াজাল ভেঙে দুটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান শাসনামলে সেই একই শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে থাকলো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। দীর্ঘ ২৪ বছর এই শোষণের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছে বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালে এই অত্যাচার-নির্যাতন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল।

পাকিস্তানী শাসকেরা পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতিকে মেধাশূণ্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। কেননা তারা বুঝতে পেরেছিল এ দেশ স্বাধীন হবেই। তাই বাঙালি যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্যই পরিকল্পিত এই হত্যাযজ্ঞ ঘটায়।”

তিনি আরো বলেন, “হানাদার বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্যাম্প স্থাপন করে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ক্যাম্পাসের জোহা হলের বন্দিশালায় ধরে নিয়ে আসা মানুষের ওপর নির্যাতন চলতো। এছাড়াও মন্নুজান হল, পশ্চিমপাড়ার ১৭ নম্বর কোয়াটার, জুবেরী ভবনে তারা নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো স্তব্ধ করতেই তারা এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছিলো। এই বর্বরতায় আমি স্বামীকে হারিয়েছি, কিন্তু এটা কষ্টের চেয়ে বেশি গর্বের। তাই বুদ্ধিজীবীদের চেতনা ও আদর্শ সবাইকে লালন করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার জানান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে স্তিমিত করা। তাই ইয়াহিয়া খান এই যজ্ঞ পরিচালনার জন্য বেলুচিস্তানের কসাই টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলীকে এখানে পাঠিয়েছিলেন। তারা পরিকল্পিতভাবে বাঙালিকে মেধাশূন্য করতে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তখন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা দেশ। বিশ্বের কোথাও এমন হত্যার নজির নাই।

এছাড়াও সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক।
দিনব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সন্ধ্যা পৌঁনে ৬টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন এবং কৌশিক সরকারের নির্দেশনা, সুমনা সরকারের গ্রন্থনা ও অভিনয়ে নাটক ‘জয়জয়িতা’সন্ধ্যা ৬টায় মঞ্চস্থ হবে।

এছাড়া শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।


©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.