রবিবার | ২৪শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ খবর :
ছাত্রদলকে ডাকসুতে মনোনয়নপত্র ক্রয় করতে না দিতে মব হচ্ছে : রিজভী চিকিৎসা শেষে ফিরলেন মির্জা ফখরুল, সংকট নিরসনের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচন আনুষ্ঠানিক দা‌য়িত্ব নিলেন পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারকে সহযোগিতা দিতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত : সেনাপ্রধান আরএমপি’র অভিযানে ইয়াবা, অ্যালকোহল ও চোলাই মদসহ গ্রেপ্তার ৪ চলতে চলতে থেমে যাচ্ছে রেলের ইঞ্জিন, স্পেয়ার পার্টসের অভাবে বিঘ্ন রেল চলাচল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের বিকল্প নেই : তারেক রহমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বদলে কী কী চান পুতিন হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য, বদরুদ্দীন উমর, মাহমুদুর ও নাহিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত রাজশাহীতে সেনাবাহিনীর অভিযান, অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার
পাহাড়ের টিলায় মরুভূমির খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন এক কৃষক

পাহাড়ের টিলায় মরুভূমির খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন এক কৃষক

প্রবাহ ডেস্ক: পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে মরুভূমির খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন মো. নুরুল আলম নামে এক কৃষক। পাহাড়ি জনপদে চাষ হওয়া এই খেজুরের আকার ও স্বাদ মরুভূমির খেজুরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে রসুলপুর গ্রামের গভীর অরণ্য ভেদ করে বিশালাকার টিলা ভূমিতে স্বপ্নের খেজুর চাষ শুরু করেন নুরুল আলম। খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করার তিন বছরের মাথায় ২০২২ সালে খেজুর চাষে প্রথম সফলতা পান এই কৃষক। দেশের মাটিতেই মরুভূমির খেজুরের স্বাদ গ্রহণ করেন। প্রথম বছরেই লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করে স্বপ্নের ভিতকে মজবুত করেন। চলতি বছর দুই লাখ টাকারও বেশি খেজুর বিক্রির আশা করেন তিনি।

রসুলপুর এলাকায় নুরুল আলমের স্বপ্নে ঘেরা খেজুর বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মরুভূমির হলদে-সবুজ আর লালচে রঙয়ের খেজুর। প্যাকেটে মোড়ানো খেজুর দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। দেশের মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে মরুভূমির খেজুর চাষের খবরে তার বাগানে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।

দীর্ঘদিন আইটি সেক্টরে সৌদি আরব ও বাংলাদেশে কাজ করা নুরুল আলমের বাড়ি ঢাকার শ্যামলীতে। দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি। আত্মীয়তার সম্পর্কের সূত্র ধরে পাহাড়ে বেড়াতে এসে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যান।

নুরুল আলম বলেন, কৃষিবিষয়ক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই কৃষি সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সে আগ্রহ থেকেই ২০১৯ সালের দিকে সবুজ পাহাড়ের ১৩ একর টিলা ভূমি ক্রয় করি। এরপরই স্বপ্নের কৃষি খামার গড়ে তুলতে শুরু করি।

তিনি বলেন, শতভাগ আমদানি নির্ভর খেজুরের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের মানুষের খেজুরের চাহিদা পূরণ করাই আমার লক্ষ্য। শিক্ষিত যুবকদের কৃষি সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। আমদানি নির্ভর ফলের চাষ করতে পারলে দেশের অর্থ বাঁচবে। যেসব কৃষি ফল হারভেস্ট করার পরও এক মাসের অধিক সংরক্ষণ করা যায় সেসব ফলের চাষ করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা কম।

নুরুল আলমের তিন বছর বয়সী কৃষি খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় শ্রমিকদের। এখানে গড়ে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বাগানের পানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে তার খামারে সাড়ে ৬ হাজার ওয়াটের সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছেন। যা দিয়ে তার বাগানে পানির সমস্যার সমাধান হচ্ছে।

 

আইটি সেক্টরে কাজ করা নুরুল আলম ২০১৯ সালের দিকে সৌদি আরব ও ইংল্যান্ড থেকে ১০০টি টিস্যু কালচার চারা সংগ্রহ করে পাহাড়ের পরিত্যাক্ত টিলা ভূমিতে খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ২৪টি গাছে ফলন দেয়। বাগানে বারোহি, আজওয়া, মিটজল ও আম্বার জাতের খেজুরের জাত রয়েছে তাতে প্রায় অর্ধেক গাছেই ইতোমধ্যে ফল ধরা শুরু হয়েছে। আগামী দেড় দুই বছরে মধ্যে বাকি সব গাছে ফল ধরতে শুরু করবে। এ বছর প্রায় দুই লাখ টাকার খেজুর বিক্রির আশা করা হলেও আগামীতে ফলন ভালো হওয়া সাপেক্ষে বিক্রি আরও বেশি হবে বলে আশা করেন নুরুল আলম।

মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক বলেন, আমরা কয়েক বন্ধু মিলে এই খেজুর বাগান দেখতে গিয়েছিলাম। বাগান মালিক আমাদের পুরো বাগান ঘুরিয়ে দেখালেন এবং তার বাগান থেকে তিনি নিজে খেজুর খেতে দিলেন। সাধারণত আমরা বাজার থেকে যেটা কিনে খাই সেটার থেকে উনার বাগানের এই খেজুর অনেক বেশি মিষ্টি, কোনো কষ নেই। আমদের কাছে তুলনামূলক অনেক ভালো মনে হয়েছে। আশা করি এই বাগান মালিক তার লক্ষ্য পৌঁছাতে পারবে।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, এই বাগান মালিক ২০১৯ সালে গাছ লাগানোর পর গত বছর প্রথম ফল আসে। আমি নিজে ৪০০ টাকা কেজি করে কিনে এনেছি। বাজারে যেটা কিনতে পাওয়া যায় সেটার তুলনায় উনার খেজুর মিষ্টি এবং সুস্বাদু। এবারও কিনে আনবো।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী বলেন, পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া সৌদি আরবের খেজুর চাষের অনুকূল। এ খেজুর একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় নুরুল আলম নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা সৌদি খেজুর চাষ করেছেন। মাটিরাঙ্গার রসুলপুরের খেজুর বাগান পরিদর্শন করে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার বাগান দেখে মনে হচ্ছে এখানে খেজুর চাষ লাভজনক হবে। তবে নতুন যারা খেজুর চাষ করবেন তাদেরকে কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে খেজুর চাষ করার পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।


ads



©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.