শুক্রবার | ১১ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ, নিহত ৩

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ, নিহত ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছে।
এ সংঘর্ষে দুই ভাইসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১০ জন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রোববার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নের মুসরাপাড়া ইয়াজপুর গ্রামে এই সংঘর্ষ ঘটে। খবর পেয়ে গোদাগড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে বিষয়টি ওই গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে এখনও টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বড়গাছী কানুপাড়া গ্রামের নাইমুল (৮০) ও মেহের আলী (৭০) এবং রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভাটাপাড়া এলাকার সোহেল রানার (৪৫)। নাইমুল ও মেহের সহোদর।

এছাড়া সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের হামলায় আহতদের মধ্যে ৬ জনকে রামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- ইউনুস আলী (২২), মো. আমু (২২), মো. রায়হান (৩৫), মো. মনিরুল (৪৫), মো. সোলেমান (৫০), রজব (৩১)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, আজ রোববার সকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পাকড়ী ইউনিয়ন পরিষদের পাশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধপূর্ণ জমিতে ধান লাগাতে যান স্থানীয় সেলিম রেজা গ্রুপের লোকজন। এতে বাধা দেয় প্রতিপক্ষ আশিক চাঁদের গ্রুপ। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সেলিম রেজা গ্রুপের আহত হয় অন্তত ১০ জন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনলে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক আছের আলী বলেন, সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে কেউ মারা যায়নি। হতাহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে যাওয়ার পর তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার দুপুর ১টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, মূলত সকাল সাড়ে ৯টার দিক থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এই সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৮/১০ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিন জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আর পথেই একজন মারা যান। বর্তমানে নিহত তিন জনের মরদেহ রামেক হাসপাতালের মরচুয়ারিতে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মর্গ থেকে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জড়িতদের ধরতে অভিযানে আছে। এই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান গোদাগাড়ী থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।

রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সনাতন চক্রবর্তী জানান, জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল আগে থেকেই। আজ সকালে কথা কটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। আর মূলত এটি সেই অর্থে সংঘর্ষও নয়। যাদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, তাদেরে বয়স দেখেন- তারা বয়োবৃদ্ধ! একজনের বয়স ৭০ আরেক জনের ৮০ বছর। মূলত এটা হামালা হয়েছে। প্রতিপক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে এই হামলা চালিয়েছে। আর অপরপক্ষ পুরোপুরি অপ্রস্তুত ছিল। তাই তারাই বেশি হতাহত হয়েছেন। তাই ঘটনার পর পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিরাও ধরা পড়বে। তারা এই ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে দেখছেন।

এদিকে সংঘর্ষের পর হতাহতের এক এক করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিয়ে আসা হলে তাদের পরিবার, স্বজন ও গ্রামের প্রতিবেশীরা আসেন। এ সময় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।


©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.