নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর তানোরে সীমান্তবর্তী চৌবাড়িয়া হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকাসহ অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে ডিসির নির্দেশে দুই দফায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত শুক্রবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রশাসক অফিসের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৌবাড়িযা হাটে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে অতিরিক্ত টোল খাজনা আদায়ের অভিযোগে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এরপরও অতিরিক্ত টোল খাজনা আদায় করা এমন অভিযোগে বিকেলে মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি জাকির মুন্সি আবারো চৌবাড়িয়া হাটে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে পুনরায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
দুই দফায় ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করে হাট থেকে চলে যাওয়ার পরেও অতিরিক্ত খাজনা টোল আদায় আরো বাড়িয়ে দেয়া হয় বলে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। সরকারী নিয়মে খাজনা আদায় না হলে গরু ব্যবসায়ীরা আসবে না বলে আশংকা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এমন ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে সরেজমিনে চৌবাড়িয়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ইজারাদারের ঘরে হিসেব নিকেশ চলছে। বাহিরে বসে আছেন ইজারাদার মোজাফফর হোসেন।
এসময় ছাড় আদায় কারী এক ব্যক্তি বলেন, প্রতি হাটে টাকাও দিতে হবে আবার জরিমানা করবে। কোন হাটে কি সরকারি নিয়মে আদায় হয়? হয় না। সব হাটেই অতিরিক্ত খাজনা টোল আদায় করতে হয়।
তিনি বলেন, থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় নেতা, চেয়ারম্যান মেম্বারদেরকে প্রতি হাটে টাকা দিতে হয়। অভিযানে জরিমানা করে কি আর খাজনা আদায় কমানো যাবে? যাবেনা বরং বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে সেটা তো তুলতে হবে। এজন্য জরিমানা করে চলে যাওয়ার পর খাজনা আরো অতিরিক্ত ২ শ টাকা বাড়িয়ে ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তর গরু ছাগলের হাট চৌবাড়িয়া।
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী ও মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউপির মধ্যে গরু ছাগলের হাট। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী গরুর খাজনা ৫০০ টাকা ও ছাগল, ভেড়ার খাজনা ২০০ টাকা।
কিন্ত হাট ইজারাদার মোজাফফর গরু প্রতি ৯০০ টাকা ও ছাগল, ভেড়া ৫০০ টাকা করে খাজনা আদায় করেন। জরিমানার পর ১৫০-২০০ টাকা বাড়তি নিয়েছেন বলে একাধিক ক্রেতারা নিশ্চিত করেন।
শুক্রবার তানোর পৌর সদর এলাকার কাবিল নামের এক ব্যক্তি কোরবানির গরু কিনেন। তার কাছে খাজনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার কাছ থেকে ১০০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ ১০০ টাকা ও বিট ২০, মোট ১১২০ টাকা খাজনা নিয়েছে।
এসব নামে ও লোক দেখানো অভিযান ছাড়া কিছুই না। কোন কথা বললেই চোলাই মদ খেয়ে কেউ ধাক্কা মারছেন আবার কেউ লাঠি তুলছেন। হাট তো না যেন অরাজকতায় ভরা। ইজারাদার ও স্থানীয় ছাড় লিখা ব্যাক্তিরা খারাপ আচরন সহ গালমন্দ পর্যন্ত করেন।
হাট ইজারাদার মোজাফফর হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে জরিমানার পর বেশি ২০০-২৫০ টাকা খাজনা আদায় করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান আমি ব্যস্ত আছি পরের হাটে আসবেন সাক্ষাতে কথা বলা হবে।
আপনি বেশি টাকা আদায় করেছেন কিনা আর আমি কেন হাটে যাব প্রশ্ন করা হলে কোন সদ উত্তর না দিয়ে সাক্ষাতে কথা হবে বলে এড়িয়ে যান তিনি।
মান্দা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ভূমি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জাকির মুন্সি বলেন আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম, সরকারী নিয়মেই খাজনা আদায় হয়েছে। আর আমি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।
ইজারাদার মাদকসেবীদের ও লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আগের চেয়ে বেশি খাজনা আদায় করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি রাত আটটা পর্যন্ত ছিলাম সরকারী নিয়মেই আদায় হয়েছে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদি হাসান(বি পি এএ) ( ডিসির) সরকারী মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেন নি। এমনকি হটসআপে কল দেওয়া হলেও ধরেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুন বুধবার বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে চৌবাড়িয়া হাটে খাজনা আদায়ের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরে নড়েচড়ে বসেন প্রশাসন।
এখবরের ভিত্তিতেই গত ২৩ জুন শুক্রবার দুই দফা মোবাইল কোর্টে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।