নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার খামারি ও কৃষকরা কুরবানিতে নামি-দামি ও বিভিন্ন ওজনের পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এবার উপজেলায় কুরবানির পশুর মাঠ কাপাচ্ছে আড়ানী পৌরসভার মাহাষ্যপাড়া গ্রামের সুজিত চন্দ্র সরকারের অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ‘চিতা’ নামে ১টি ষাঁড় ও উপজেলার দিঘা গ্রামের রকি হোসেনের পাকিস্তানি জাতের ‘তোতাপুরী’ ছাগল।
৫ ফুটের ২ ইঞ্চি কম অর্থাৎ ৫৮ ইঞ্চি লম্বা ও ৪০ ইঞ্চি উচ্চতার খয়েরি লাল রঙের ছাগলটির নাম রাখা হয়েছে ‘তোতাপরি’ আর সুজিত চন্দ্র সরকারের ১০ ফুট লম্বা ও সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার কালো-সাদা (পাখরা) রঙের দুষ্ট প্রকৃতির ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘চিতা’। ষাঁড় ও ছাগল দেখতে প্রতিদিনই তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। আসছেন ক্রেতারাও। পশুর মালিকারা জানান, গরমে বৈদ্যুতিক ফ্যান ব্যবহার ও কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে পরম যত্নে তাদের লালন পালন করেছেন।
জানা যায়, এবারে উপজেলা প্রাণি সম্পদ মেলায় প্রথম স্থান দখল করেছে রকি হোসেনের ‘তোতাপরি’। ১১০ কেজি ওজনের ‘তোতাপরি’ছাগলটির মাংস ধরা হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ কেজি। ১লাখ ১০ হাজার টাকা দাম হলেও বিক্রি করেননি। ১লাখ ২০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করবেন।
ছাগলের মালিক রকি হোসেন জানান, ১৬ মাস আগে ৫মাসের বাচ্চা কিনেছিলেন ১৯ হাজার টাকা দিয়ে। তাকে খাওয়ান-ছোলা,শুকনা খড়, হ্যাংকারের ও গমের ভুষি এবং ভুট্রার ময়দা। এছাড়াও প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। ছাগল কিনতে আসা আব্দুল হানিফ জানান, আর্থিক সংকটের কারণে পছন্দের ছাগলটির দামে সক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
এদিকে, সুজিত চন্দ্র সরকারের নিজের পালিত গাভী থেকে জন্ম নেয় অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি। তিন বছর আগে জন্ম নেওয়া ষাড়টির নাম রাখেন ’চিতা’। এর মাংসের ওজন ধরা হয়েছে প্রায় ২০ মণ। সুজিত চন্দ্র সরকার জানান,দাম ৮/৯ লাখ টাকা হলেও বিক্রি করবেন । গ্রামে বিক্রি না হলে শহরের হাটে তুলবেন।
তিনি জানান, রোদ, মেঘ ও বৃষ্টি নামের আরও ৩টি গরু রয়েছে তার। চিতার জন্মের পরে একই গাভীর পেট থেকে জন্ম নেয় ‘রোদ’ ও ‘মেঘ’। আর ১ বছর আগে ১লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে যেটি কিনেছেন তার নাম রাখা হয়েছে ‘বৃষ্টি’। তার মা রেখা রানী সরকার আদর করে গরুগুলোকে সেই নামে ডাকেন ।
প্রকৃতিক খাবার ছাড়াও তাদের খাওয়ান, খড়,ভূট্টা,ধান,গম,খেসারি ও বুটের মিশিত্র দানাদার খাবার। কোনো ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করেননি। প্রতিদিন একেকটি গরুর খাবারে খরচ হয় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। কুরবানিতে বিক্রি করবেন বলে ‘রোদ’ ‘মেঘ’ আর ‘বৃষ্টি’র দাম হেঁকেছেন, ওজন ভেদে ৬ লক্ষ থেকে ৫লক্ষ টাকা।
রেখা রানী সরকার বলেন, নিজেদের সন্তানের মতন পরম যত্নে পশুদের পালন করছি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওদের দেখি। মুক্তি রানী সরকার বলেন, পরিবারের রান্নার পাশাপাশি ওদের জন্য দুই বেলা ভাত-খিচুড়ি রান্না করে দেই। তারা জানান, ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে আলাদা মায়া হয়ে গেছে। কুরবানিতে বিক্রি হয়ে গেলে বেশি খারাপ লাগবে।
ষাঁড় দেখতে আসা পাশের গ্রামের আলিম উদ্দীন নামের একজন বলেন, লোকমুখে গল্প শুনে দেখতে এসেছি। এলাকার মজিবর রহমান বলেন, আমার জানা মতে এতো বড় ষাড় গরু আশপাশের কয়েক গ্রামের ভেতর নেই। তিনি জানান, এই গরু দেখতে প্রায় দূর-দূরান্তের মানুষ আসছে। তবে এত দামের গরু কেনার খদ্দের এখানো পাওয়া যায়নি। অনেকেই শুধু দেখতে আসছেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শরিফুল ইসলাম জানান, ছাগল- গরুগুলো ছোট থেকেই তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। প্রাকৃতিক খাবার না খাওয়ালে এই গরমে এতো বড় ষাঁড়-ছাগল বাঁচত না। এবারের কুরবানির জন্য উপজেলায় অনেক গরু, ছাগল,মহিষ,ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। যা কুরবানির চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হয়েছে।