রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চৌবাড়িয়া হাটে খাজনার নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজিরি অভিযোগ

চৌবাড়িয়া হাটে খাজনার নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজিরি অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর তানোর উপজেলার সীমান্তবর্তী চৌবাড়িয়া পশু হাটে খাজনা আদায়ের নামে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন টাকা আদায় করছেন ইজারাদার মোজাফফর হোসেন। তার লাঠিয়াল বাহিনী পুরো হাট চোষে বেড়াচ্ছেন।

তাদের চাহিদামত খাজনা দিনে না চাইলে লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা ধরে আটকে রাখেন। এমনকি ছাড়পত্রে কোন টাকা উল্লেখ করা হয়না বলেও অহরহ অভিযোগ রয়েছে।

আবার গরু গাড়িতে তোলা ও বেধে রাখার জন্য বিট হিসেবে ২০ টাকা করেও আদায় করা হয়। শুধু তাই না হাটে কোন গরু অসুস্থ হলে জবাই করে নওগাঁ ও রাজশাহীর বিভিন্ন হোটেলে দেওয়া হয় বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেন।

এতে করে দিনের দিন গরু আসা কমে গেছে, সেই সাথে ইজারাদারদের অশালিন আচরনেও ক্ষুব্ধ ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান দিয়ে সরকার নির্ধারিত খাজনা আদায় না হলে হাট ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা আছে বলেও আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শি সুত্রে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গের রাজশাহীর তানোর উপজেলা ও নওগাঁর মান্দা এবং নিয়ামতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ঐতিহ্য বাহী চৌবাড়িয়া হাট। পশু হাটটি মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউপির মধ্যে ও তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউপির অনেক অংশ রয়েছে হাটে।

২০২২ সালের আগে পশু হাট বসত চৌবাড়িয়া কলেজ মাঠে, যার কিছু অংশ ছিল কামারগাঁ ইউপির মধ্যে। সেখান থেকে জমি কিনে পশু হাট সরিয়ে নেয়া হয়েছে চৌবাড়িয়া ব্রীজের উত্তর পশ্চিম দিকে।

বিশাল এরিয়া নিয়ে গরুর হাট বসে বিকেলে এবং ছাগল ও ভেড়ার হাট বসে সকালে। সপ্তাহে শুক্রবার বসে হাটটি।
গত শুক্রবারে কোরবানির গরু কিনতে যান কামারগাঁ ইউপি এলাকার এরশাদ নামের এক ব্যক্তি।

তিনি বলেন, প্রচন্ড তাপপ্রবাহ ছিল, হাটে থাকায় যাচ্ছিল না। কিন্তু কোরবানীর গরু কিনতেই হবে। ব্যাগে ছিল প্রায় ৭ লাখের মত টাকা। টাকার ব্যাগ নিয়ে গরু দেখাদেখি করছি। এমন সময় দেখি ব্যাগ কেটে ফেলেছে।

তবে টাকা নিতে পারেনি, ১ হাজার টাকার ৮ টি নোট কেটে ফেলে। আমার সাথে থাকা লোক দেখতে পেলেও খুজে পাওয়া যায়নি। তবে অনেক গরু ব্যাপারিরা বলেন অযথা খুজে লাভ নেই, হাটে চোর কিংবা চোরাই গরু নামলে ইজারাদারের সাথে সমন্বয় থাকে।

তিনি আরো বলেন, গরু কিনার পর ছাড়পত্র নেওয়ার সময় ৮০০ টাকা নিল এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়েছে। অথচ ছাড়পত্রে টাকার এমাউন্ট লিখেনা। তাদের বলা হলে তারা সাব জানিয়ে দেয় এভাবেই ছাড়পত্র হয়। আবার বিট হিসেবে ২০ টাকা নিয়েছে।

তানোর পৌর সদর এলাকার সাহেব নামের এক ব্যক্তি বলেন, কোরবানির জন্য গরু কিনে ছাড়পত্রের জন্য ৮০০ টাকা, বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০ টাকা ও বিট হিসেবে ২০ টাকা। কোন কথায় বলা যাবে না। মনে হল এক প্রকার অরাজকতা ছাড়া কিছুই না।

সরকারী নিয়ম অনুযায়ী গরু প্রতি ৫০০ টাকা ছাগল, ভেড়া ২০০ টাকা। সেই তালিকা সাটানো আছে। কিন্তু ইজারাদার বড় সরকার, তার নিয়মই চলে খাজনার নামে চাঁদাবাজি।

মিলন নামের গরু ব্যবসায়ী বলেন, আমরা নিয়োমিত ব্যবসা করি, আমাদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকা এবং বিট গরুপ্রতি ২০ টাকা করে নেয়।

চৌবাড়িয়া হাটের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, এর আগেও অনেকে হাট নিয়ে খাজনা ৬০০-৭০০ টাকা করে আদায় করেছে। কিন্তু এবার মোজাফফর হাট নেওয়ার পর যে অরাজকতা শুরু করেছেন তা কল্পনাতীত।

সে খাজনা বাবদ গরু প্রতি নিম্মে ৮০০ টাকা থেকে উর্ধ্বে ১ হাজার টাকা আদায় করছেন, আবার ছাগল প্রতি নিম্মে ৫০০ টাকা থেকে উর্ধ্বে ৭০০ টাকা করে নিচ্ছেন।

শুধু তার অনৈতিক অরাজকতার জন্য অনেক ব্যাপারিরা হাটে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কারন ৯০০-১০০০ টাকা খাজনা আদায় হলে কেন আসবে। প্রতি হাটে গরু কেনা বেচা হয় নিম্মে ৪৫০০ থেকে উর্ধ্ব ৫০০০ হাজার, আর ছাগল নিম্মে ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার।

৪৫০০ গরু কেনা বেচা হলে ৯০০ টাকা করে আদায় করলে এক হাটে ৪০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা । ৫০০০ গরু কেনা বেচা হলে ৯০০ টাকা করে ছাড়পত্র আদায় হলে ৫৪ লক্ষ টাকা। ১৫০০ ছাগল কেনা বেচা হলে ৬০০ টাকা ছাড় ধরা হলে ৯ লক্ষ টাকা, আর ২০০০ ছাগল কেনা বেচা হলে ১২ লক্ষ টাকা আদায় করা হয় প্রতি হাটে।

প্রতি হাটে গড়ে ৪৫০০ গরু কেনা বেচা হলে বছরে ৪৮ হাটে ৯০০ টাকা করে খাজনা আদায় হলে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা চাঁদাবাজি বা খাজনা আদায় করা হয়। প্রতি হাটে গড়ে ১৫০০ ছাগল বিক্রি হলে ৪৮ হাটে ৪ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা আদায় হয়।

ইজারাদার মোজাফফর হোসেন বলেন, গতবারের চেয়ে দ্বিগুনের বেশি টাকা দিয়ে হাট নিয়েছি। অতিরিক্ত টাকা আদায় না করলে লোকসান হবে। সরকারী নিয়মের বাহিরে কিভাবে দ্বিগুন টাকা আদায় করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা উপজেলা জেলা পর্যায়ের প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন।

তারা না জানলে তো এভাবে আদায় করা যাবে না। প্রতি হাটে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে টাকা দিতে হয়। আমি তো জমি বিক্রি করে টাকা দিব না। হাট থেকেই আদায় করে দিতে হচ্ছে।

সরকারী তালিকায় গরু ৫০০ টাকা ও ছাগল ২০০ টাকা মূল্য নির্ধারন করে সাইনবোর্ড দেওয়ার পরও কেন বেশি আদায় করছেন এবং ছাড়পত্রে টাকা লিখা থাকেনা কেন প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন, কোন হাটেই টাকা উল্লেখ করেনা।

আর সরকারী মূল্য তালিকা প্রশাসন লোক দেখানোর জন্য সাটিয়েছেন,আর আমি এত কিছুর জবাব দিতে বাধ্য না, আপনি যত খুশি নিউজ করেন কোন লাভ হবেনা বলে প্রচুর দাম্ভিকতা দেখান তিনি।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা আঞ্জুমান বানুর সরকারী মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এমনকি হোয়াটসআপে মেসেজ দিলেও তিনি কোন উত্তর দেন নি।

এব্যাপারে নওগাঁ জেলা প্রশাসক ( বিপিএএ) খালিদ মেহেদি হাসানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ এর আগেও এসেছে।

তিনি বলেন, আগামী হাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।


©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.