শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তানোরে ৩৫টি গভীর নলকূপ অকেজো

তানোরে ৩৫টি গভীর নলকূপ অকেজো

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর তানোরে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রায় ৩৫ টি গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। অপর দিকে প্রায ৫শ’ ২৫ টি গভীর নলকুপে পানি উঠছে আগের চেয়ে অর্ধেক। অপরিকল্পিত ভাবে যেখানে সেখানে ব্যপক ভাবে মিনি মটার স্থাপান করে পানি উত্তোলন করে জমিতে চাষাবাদ করার ফলে গত ৫বছর থেকে ৬ বছরের মধ্যে দ্রুত পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এসব গভীর নলকুপ গুলো নতুন ভাবে স্থাপন না করা হলে হুমকির মুখে পড়বে এ অঞ্চলের চাষাবাদ। সচেতন মহল মনে করছেন অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ মটার স্থাপন বন্ধ করে পরিকল্পিত ভাবে সেচের ব্যবস্থা না করা হলে আগামী ১০ বছর পরে পানির স্তর আরো নিচে নেমে যাবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কৃষকরা বলছেন, ৯০ এর দশক এই গভীর নলকুপ গুলো ৮০ থেকে ১শ’ ফিট পর্যন্ত গভীরে বরিং করে পানি উত্তলন করা হচ্ছি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বর্তমানে ১শ’ ২০ থেকে ১শ’ ৪০ ফিট গভীরে বরিং করতে হচ্ছে।

পানির স্তর নবচে নেমে যাওয়ায ১ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩০টি গভীর নলকুপের মটার পড়ে গেছে। ১০ আগে যেসব গভীর নলকৃপে চাষাবাদ হতো ৪শ’ বিঘা থেকে ৩শ’ বিঘা সেসব গভীর নলকুপে এখন চাষাবাদ করা হচ্ছে ১শ’ থেকে ২বিঘা পর্যন্ত। এসব গভীর নলকুপে পানি কম উঠায় গত ৫ বছরে কৃষকরা সেচ কমিটির অনুমোদন না নিয়ে হাজার হাজার মিনি মটার স্থাপন করে চাষাবাদ করছেন। ফলে, দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর।

ফলে দ্রুত অবৈধ মটর বন্ধ না হলে চলতি মৌসুমেই গভীর নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। তবে পল্লী বিদ্যুৎ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে গভীর নলকূপ মেরামত না করায় অকেজো হয়ে পড়ছে গভীর নলকুপ।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি আলু উত্তোলন শেষে কৃষকরা বোরো রোপন শুরু করেছেন। শুরুতেই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টি গভীর নলকূপের মটার পুড়ে গেছে। একারনে অনেক কৃষক তাদের জমিতে রোপন করতে পারছেন না। প্রতিদিন দু চারটি করে মটার পুড়ে বিকল হয়ে পড়ছে। যার কারনে সেচ নির্ভর বোরো চাষ হুমকিতে পড়েছে।

অপর দিকে অপারেটররা বলছেন, গভীর নলকূপের আশপাশে অবৈধ বানিজ্যিক মটারের ছড়াছড়ি। যার কারনে গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। দিন দিন ভূগর্ভের পানি নিছে নেমে যাচ্ছে।

অপারেটররা আলো বলছেন, গভীর নলকিপগুলো কয়েক ঘন্টা চলার পর বালি পাথর উঠা শুরু কচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যুতের ভোলটেজ পাচ্ছেনা সঠিক ভাবে। ত্রি ফেজের লাইনে কখনো দুফেজে কখনো এক ফেজে লাইন থাকার কারনে মটার পড়ে যাচ্ছে। মুরগীর ফার্ম ও আম ও পেয়ারা বাগানের নামে পল্লী বিদ্যুৎ মটার গুলোতে বেপরোয়া ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। নিয়ম না মেনে এধরনের মটার স্থাপনের ফলে গভীর নলকূপ গুলো অকেজো হয়ে পড়ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা দেখা গেছে, উপজেলার পাচন্দর ইউপির দুবইল সাহাপুর, প্রকাশনগরসহ আশপাশে ও কলমা ইউপির নড়িয়াল চকরহমতপুর সহ আশপাশে ফার্ম ও বাগানের নামে মটার স্থাপন করে আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন নির্মান করে জমিতে সেচ দেযা হচ্ছে অথচ এসব মটারে সেচ কমিটির অনুমোদন না নিয়েই চালানো হচ্ছে এসব মটার।

চকরহমত পুর মৌজার গোয়ালপাড়া ধানী মাঠে আসাদ ও গোলাম নামের দুই ব্যক্তি পাচ হর্সের মটর স্থাপন করে আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন তৈরি করে সেচ দিচ্ছেন। তবে আসাদ মারা যাওয়ার পর তার শ্বশুর মুনসুর মটর পরিচালনা করছেন।

তিনি জানান, গভীর নলকূপে পানি দিতে পারেনা এজন্য মটারে সেচ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া হয়। বিঘাপ্রতি ২৫০০-৩০০০ টাকা হার নেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ভূগর্ভের পানি নিচে নেমে যাওয়ার কারনে কৃষি মন্ত্রনালয় বিগত ২০১৪ সালে নতুন ভাবে সেচ মটার স্থাপন নিষিদ্ধ করে দেন। সেচ মটর স্থাপন করতে হলে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন লাগে। কিন্ত পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণী কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ফার্ম ও বাগানের নামে শতশত মটর স্থাপন করেছেন। কাগজে কলমে ফার্ম বাগান থাকলেও সে সব মটার থেকে দেদারসে সেচ কার্যক্রম চলছে।

বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের বেপরোয়া ভাবে মটারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় ও জলবায়ুর প্রভাবে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। মুলত একারনেই গভীর নলকূপের মটার পুড়ে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মমকর্তাদের বিষয়গুলো অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অবৈধ সেচ মটার বন্ধ না হলে আরো বিকল হবে এবং লেয়ার নিচে নেমে যাবে।

তবে, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম জহুরুল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, গভীর নলকূপ গুলো দীর্ঘ দিন ধরে মেরামত করা হয়নি। এজন্য বিকল হচ্ছে। অবৈধ ভাবে সেচ দিলে উপজেলা সেচ কমিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিবেন এখানে আমাদের কি করার আছে বলেন? উল্টো প্রশ্ন করে তিনি বলেন মটার স্থাপন করার কারনে চাষাবাদ বেড়েছে। আমরা লাইন দিতে পারি বিচ্ছিন্ন করতে পারি না। সেচ কমিটির সভাপতি ইউএনও ও সদস্য সচিব বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী।

যদি মটারের জন্য গভীর নলকূপের সমস্যাদি হয় বিচ্ছিন্ন করে দিবেন। তবে এটা মুল সমস্যা না, নতুন ভাবে বরিং করলে সমস্যাদি হবে না বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, নতুন মটার স্থাপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, কাজ বন্ধ না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.