শুক্রবার | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাসার বেলকুনি থেকে শুরু, বর্তমানে হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রুলিবালা কারখানায়

বাসার বেলকুনি থেকে শুরু, বর্তমানে হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রুলিবালা কারখানায়

প্রবাহ ডেস্ক: সোনার বিপরীত ধাতব মুদ্রা পিতল থেকে তৈরি হচ্ছে হাতের চুরি রুলিবালা। দিন দিন সোনার মুল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে ব্যাপক কদর বেড়েছে পিতল থেকে তৈরি এসব রুলিবালা’র। যার চাহিদা রয়েছে দেশে এবং বিদেশে। আর এসব কারখানায় হয়েছে ৮শ থেকে এক হাজার নারী পুরুষের কর্মসংস্থান। পার্ট টাইম কাজের সুযোগ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পাশাপাশি এখানে কাজ করে নিজের এবং পরিবারের হাল ধরছেন ।

নওগাঁ শহরের দপ্তরি পাড়ার বাসীন্দা স্বর্ণের কারিগর শেখ কামাল। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় ২০০৭ সালে পাড়ি জমান দুবাইতে। এরপর আবারও ২০১২ সালে দেশে ফিরে কিছু করার ইচ্ছা। প্রথমে নিজ বাড়ির বেলকুনী থেকে একা শুরু করেছিলেন এই কাজ। তার কারখানায় এখন কাজ করছে ১৫০ জন শ্রমিক এবং মাঠে কাজ করছেন আরো প্রায় ৬০০ জন। যাদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক। দেখতে সোনার মতো হওয়ায় কম দামের মধ্যে ক্রেতাদের কাছেও পছন্দের।

প্রথম দেখায় মনে হতে পারে কোন স্বর্ণের খনিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা। যে যার কাজ মনোযোগ দিয়ে করছেন। কেউ পিতলের পাত সাইজ করে কাটছেন, মুখ জোড়া দিচ্ছেন, কেউ আগুনে পুড়াচ্ছেন আবার কেউ ব্রাশ দিয়ে পরিস্কার করছেন। এমন কর্মযজ্ঞের দেখা মিলবে নওগাঁ শহরের দপ্তরি পাড়ায়। পিতলের পাত সাইজ মতো কেটে পাইপ করে গোল করা হয়। তারপর গালা দিয়ে ভেতরের ফাপা অংশ ভরাট করে মুখ বন্ধ করে নকশা তৈরির জন্য বিভিন্ন গ্রামে নারী কারিগরদের কাছে পাঠানো হয়। নকশাকৃত ওই চুরি আবারও কারখানায় নিয়ে এসে গ্যাস দিয়ে পুড়িয়ে ভিতরের গালা বের করে কয়েক হাত বদল হয়ে ৩-৪ বার ওয়াস করে গোল্ডেন কালার করে চুরি রুপ দেওয়া হয়।

শেখ কামাল জানান- দৈনিক তার কারখানা থেকে ১১শ-১২শ জোড়া রুলিবালা উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশের সবচেয়ে বড় বাজার ঢাকা’র চক-বাজারে তার কারখানার তৈরি রুলিবালা বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও এসব চুরি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ সহ এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা রয়েছে । সরকারী সহযোগিতা পেলে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে রপ্তানি করার পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি।

সাংসারিক কাজের পাশাপাশি কারখানায় কাজ কারখানায় কাজ করে বাড়তি আয় করছেন নারী শ্রমিকরা। কেউ কাজ করেন দিন চুক্তিতে আবার কেউ প্রতি জোড় চুরি তৈরিতে। এতে প্রতিমাসে অন্তত ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করছে। এ কারখানায় কাজ করে অনেকের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। এছাড়া পার্টটাইম কাজের সুযোগ থাকায় পড়াশুনার পাশাপাশি এ কারখানায় কাজ করে বাড়তি আয় করছে শিক্ষার্থীরা। পড়াশুনার জন্য পরিবার থেকে কোন খরচ নিতে হয়না তাদের। বরং বাড়তি আয় থেকে পরিবারকে সহযোগীতা করছে তারা।

এদিকে কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সবধরনের সহযোগীতার কথা জানান বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা শামীম আক্তার মামুন। তিনি বলেন- এ ধরনের নতুন উদোক্ত্যাদের জন্য সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় নানান পরামর্শ এবং সহোযোগিতা করা হয়ে থাকে। দেশে এর চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিতে সরকারিভাবে সকল সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া নানান উদ্যোক্তা মেলাতে এই পন্যগুলোর পর্দশনীতে বিসিক সব সময় নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে বলে তিনি জানান।

পিতলের পাত থেকে চুরি তৈরি জেলায় এমন ৫ টি কারখানা আছে। যেখানে মাসে প্রায় ৫০ হাজার চুরি উৎপাদন হয়। যার টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি টাকা। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২ হাজার শ্রমিকের।

স্বর্ণের দাম যতই বাড়ছে পিতলের তৈরি চুরির চাহিদাও বাড়ছে। ব্যাপক সম্ভবনাময় এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাসহ সবধরণের সহযোগীতা পেলে অর্থনীতিতে আরো এগিয়ে যাবে এমন মনে করছেন ব্যবসায়িরা।


©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.