শুক্রবার | ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ খবর :
নিজেদের ছবি উধাও, পোস্টে কাঁটাছেঁড়া! রাজদীপ-তন্বী প্রেমভাঙার নেপথ্যে কি অন্য নারী? ৬ সীমান্ত দিয়ে ১০৫ জনকে বিএসএফের পুশইন সকালে ঘুম থেকে উঠে এই ৫ ভুল করলেই বারোটা বাজবে লিভারের! অজান্তেই তিলে তিলে শেষ হবে শরীর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল আরএমপি ডিবির অভিযানে ১০টি চোরাই মোবাইলসহ গ্রপ্তার ১ সরকারি হাসপাতাল পরিচ্ছন্নের কাজ বেসরকারি খাতে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে কি না, পুনর্বিবেচনা করবে বিএনপি দ্বিতীয় দিন শেষে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল ২৫৩ রানে পিছিয়ে ডেঙ্গুতে একদিনে ৪৬ জন হাসপাতালে ভর্তি, করোনায় সংক্রমিত ৬ ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে, ইশরাক আন্দোলন স্থগিত করলেন
রাজশাহী রেল স্টেশনে প্রথম নারী স্টেশন মাস্টার

রাজশাহী রেল স্টেশনে প্রথম নারী স্টেশন মাস্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সব ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নারীরা নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন। সেদিন আর নেই যে মেয়েরা শুধু ঘরের কাজই করবেন। নারীদের এখানে চাকরি করা যাবে না, ওখানে চাকরি করা যাবে না। এসব পুরোনো ধ্যান-ধারণাকে পেছনে ফেলে আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা।

পুরুষদের সঙ্গে একই কাতারে থেকে নারীরা এখন সব ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের নারী স্টেশন মাস্টার সুরাইয়া পারভিন। শতবর্ষের বৃহত্তর ও পুরোনো রেলওয়ে স্টেশন রাজশাহী। উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রেলপথে চলাচল করার জন্য স্টেশনটির গুরুত্ব সেই বৃটিশ আমল থেকেই অনেক বেশি। সেই গুরুত্বপূর্ণ রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন পরিচালনা করার জন্য স্টেশন মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী। ২০১৬ সালে সুরাইয়া পারভিন সহকারী স্টেশন মাস্টার হিসেবে রেলওয়েতে যোগদান করেন। পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মির্জাপুর গ্রমে হলেও তার বাবা ফজলুর রশিদ রেলওয়ের কর্মচারী হিসেবে রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন।

সেই সুবাদে শৈশব-কৈশোর কেটেছে রাজশাহীতে। রাজশাহী নগরীর বালিয়াপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে জামালপুর থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে নারী স্টেশন মাস্টার সুরাইয়া পারভিন বলেন, রাজশাহী স্টেশনে শত বছরের ইতিহাসে আমি প্রথম নারী স্টেশন মাস্টার। কাজে যোগদানের সময় তখন অনেকেই বলেন, অসম্ভব! তুমি রাজশাহীর মত ব্যাস্ততম স্টেশনে দায়িত্ব পালন করতে কখনো পারবে না। সম্ভবই না। নারী হয়ে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করা কিন্তু কঠিন! স্টেশনে নারী স্টেশনে মাস্টার! এ চাকরি মেয়েদের জন্য না। এখানে দিনে রাতে শিফটিং ডিউটি পড়বে। স্টেশনে প্রচুর কাজ, যা একটা মেয়ে কখনো করতে পারবে না।

আমাকে অনেকেই এমন অনেক রকম কথা বলেছে। আমি ভয়কে দূরে ঠেলে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে হাসিমুখে জয়ী হয়েছি, আমি পেরেছি। আমাকে স্টেশনের স্টাফরা সহযোগিতা করেছেন। নারী স্টেশন মাস্টার সুরাইয়া পারভিন আরও বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল, ভালো একজন শিক্ষিকা হবো। এজন্য ছাত্রজীবন থেকে অনেক টিউশনি করেছি। ভাগ্যচক্রে আমি মাস্টার তো হয়েছি, তবে স্টেশন মাস্টার। ২০১৬ সালে স্টেশন মাস্টার হিসেবে যোগদান করি। এর পর আমার বিয়ে হয়, আমার অনোম নামের ৮ বছরের ছেলে আছে। পরিবারের বড়মেয়ে হিসেবে পরিবারের অনেক দায়বদ্ধতা ছিল, বাড়ির বড় সন্তান আমি। আমাকেই কিছু করতে হবে।

২০১৫ সালে রেলওয়ের চাকরির সার্কুলার বের হলে। বাবার উৎসাহে ঘনিষ্ঠ এইজপদে আবেদন করি। রেলওয়েতে চাকরির আবেদন করেছিলাম কথাটি শুনে বাড়ি থেকে বলেছিল, রেলওয়েতে চাকরি পেতে মামু-খালু থাকতে হয় কিন্তু! লাখ লাখ টাকা লাগে চাকরি পেতে হলে! তখন রেলওয়ে চাকরি পাওয়াটাও একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল। তখন রেলওয়ের চাকরি মানেই সোনার হরিণ পাওয়া। বাবা রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন, তাই আমার পোষ্যকোটা ছিল।

সেই মনোবল নিয়ে আমি লিখিত, মৌখিক পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করি। যেদিন ফলাফল বের হয়, সে খবরটাও অন্যের কাছ থেকে শুনতে হয় যে আমি পরীক্ষাতে পাস করেছি। আমার ধারণা ছিল, চাকরিটা হবে না। মনোবল শক্ত ছিল বলেই চাকরিটা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় প্রত্যয় এবং প্রগাঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে যে এগিয়ে যাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমারাত একঝাঁক নারী এই স্টেশনে বিভিন্ন পদে চাকুরী করছেন। বৈদ্যুতিক বিভাগের লাইটিং অফিসের সুফিয়া খাতুন,ট্রাফিকের রোজি,সালমা ও টিসি পদে কয়েকজন নারী কর্মরত।

আধুনিক যুগে মেয়েরা কেনই বা বিশ্বাস করবে, তারা চ্যালেঞ্জ নিতে জানে না? মানুষ দেখুক! নারী বলে কেন পিছিয়ে থাকব। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, সব ধরনের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। নারীরা কোন দিকে যাবে, সেই লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে, তাহলে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। নিজেকে মানুষ ভাবতে হবে, ছেলেরা শুধু পারবে এমন নয়, মেয়েরাও সব কাজ করতে পারবে। তাহলে মেয়েরাও আর পিছিয়ে থাকবে না।


ads



©2022 newsprobaha.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.